Image description
 

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অন্তত ৮২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে শুধু দেইর আল-বালাহ শহরে শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় এক বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৯ জন শিশু ও ৪ জন নারী ছিলেন। এ হামলায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন, যাদের ১৯ জনই শিশু।

জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এই হামলাকে ‘অমানবিক’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, “সাহায্যের আশায় দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারগুলোকে হত্যার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।” তিনি আরও বলেন, “গাজায় সাহায্য পৌঁছাতে না পারায় শিশুদের ক্ষুধা ও অপুষ্টির ঝুঁকি বেড়েছে, এবং দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনাও দিন দিন বাড়ছে।”

ইউনিসেফ ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পূর্ণ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে এবং এই হামলার যথাযথ তদন্তের দাবি করেছে।

 

হামাস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইসরায়েল একটি সংগঠিত গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, রাস্তাঘাট, শরণার্থী ক্যাম্প ও বেসামরিক স্থাপনায় একের পর এক হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জাতিগত নির্মূল অভিযানের শামিল, যা গোটা বিশ্বের চোখের সামনে ঘটছে।”

 

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তাতে এখন পর্যন্ত ৫৭,৭৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৩৭,৬৫৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। হামাস জানিয়েছে, তারা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে ১০ জন বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে, তবে এখনো সহায়তা প্রবাহ এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে জানিয়েছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ এবং ৫০ জন বন্দির অর্ধেক মুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, হামাস যদি নিজেদের সামরিক ও প্রশাসনিক শক্তি হস্তান্তর না করে, তাহলে এই যুদ্ধ স্থায়ীভাবে থামবে না।

এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজার দক্ষিণাঞ্চল রাফায় ফিলিস্তিনিদের জোর করে স্থানান্তরের একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যা যেকোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র একজন মুখপাত্র তামারা আলরিফাই এই পরিকল্পনাকে “একটি বিশাল ঘনবসতিপূর্ণ বন্দিশিবির” গঠনের প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আমরা এই ধরনের বড় আকারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থাকতে পারি না।”

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক প্রধান কায়া ক্যালাস জানিয়েছেন, গাজায় খাদ্য ও জ্বালানি সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি হয়েছে।

তিনি জানান, এই চুক্তির আওতায় আরও বেশি সীমান্ত পথ খুলে দেওয়া হবে, সাহায্যের ট্রাক প্রবেশ করবে, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করা হবে এবং সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন আশা করছে, ইসরায়েল চুক্তির সব শর্ত মেনে চলবে। ক্যালাস জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে জর্ডান ও মিসরের দিক থেকে সাহায্য করিডোর পুনরায় চালু করা হবে এবং গাজায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বেকারি ও রান্নাঘরগুলো পুনরায় চালু করা যাবে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সাআর ভিয়েনায় এক সম্মেলনে অংশগ্রহণকালে এই চুক্তির কথা স্বীকার করেন এবং বলেন, “ইইউ-র সঙ্গে আমাদের আলোচনার ফলেই এই চুক্তি হয়েছে।”

তবে এই সাহায্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে যাবে নাকি বিকল্প মার্কিন ও ইসরায়েল-সমর্থিত বিতর্কিত ব্যবস্থার মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।

সূত্র: আল জাজিরা