
ভারতের বিহার রাজ্যের পূর্ণিয়া জেলায় ডাইনি বিদ্যা চর্চার অভিযোগ তুলে একই পরিবারের পাঁচজনকে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার রাতে পূর্ণিয়ার তেতগামা গ্রামে এ মর্মান্তিক ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহতদের মৃতদেহ আগুনে পোড়ানোর পর পাশের একটি জলাশয়ে ফেলে দিয়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হয়।
পুলিশ জানায়, নিহতরা আদিবাসী ওরাঁও সম্প্রদায়ের সদস্য। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, ঝাড়ফুঁক ও লোকজ চিকিৎসা নিয়ে বিরোধ থেকেই এ হামলার সূত্রপাত। নিহত বাবুলাল ওরাঁও এসব চর্চার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি একই গ্রামের রামদেব ওরাঁওয়ের পরিবারে একটি শিশুর মৃত্যু এবং অপর একজন অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বাবুলালের পরিবারের ওপর ডাইনি চর্চার অভিযোগ উঠে। এরপরই ঘটে গণপিটুনির ঘটনা।
প্রথমে পাঁচজনকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়, তারপর তাদের ওপর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ এখন তদন্ত করছে, তারা আগুন লাগানোর সময় জীবিত ছিলেন কিনা। নিহতদের মধ্যে একজন কিশোর সেদিন বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। পরে সে পুলিশকে খবর দেয় এবং চারজন প্রধান অভিযুক্তের নাম জানায়, যাদের মধ্যে তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পূর্ণিয়া শহরের সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) পঙ্কজ কুমার শর্মা বলেন, “এই হত্যার সঙ্গে ঝাড়ফুঁক ও ডাইনি বিদ্যার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। তবে তদন্ত চলছে। আমরা মনে করছি, পুরো গ্রামই হয়তো এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।”
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিহারের বিরোধীদলীয় নেতা তেজস্বী যাদব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “পূর্ণিয়ায় একই পরিবারের পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিহারে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।”
পূর্ণিয়ার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রাজেশ রঞ্জন বলেন, “আমরা যখন মহাকাশে মঙ্গল অভিযানে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন এখানে মানুষ ডাইনি সন্দেহে গণহত্যা চালাচ্ছে— এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।”
বিহার কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ কুমার বলেন, “বিহারে গরিব, দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউই এখন আর নিরাপদ নয়। এটি স্পষ্টত একটি জঙ্গলরাজ।”
এ ঘটনাটি ভারতের গ্রামীণ সমাজে কুসংস্কার ও ডাইনি সন্দেহে সহিংসতার ভয়াবহ বাস্তবতা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। পুলিশের কঠোর তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন মানবাধিকারকর্মীরা।