Image description

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক সকল আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভিসা অনুমোদনের আগে সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই বাধ্যতামূলক করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে উদ্বেগ বাড়ছে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই হলো একটি প্রক্রিয়া যা ট্রাম্প প্রশাসন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে আবেদনকারীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশযোগ্যতা মূল্যায়ন করা হয়। এই যাচাইয়ের আওতায় আসা প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, এক্স, লিংকডইন ও টিকটক।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইল গাজায় পাল্টা বোমা হামলা শুরু করে। এই সংঘাতের আবহে গত বছর থেকে মার্কিন কলেজ ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিবাদ এবং ইহুদি-বিদ্বেষী মনোভাব মাথাচাড়া দেয়। 

ভিসা ইন্টারভিউয়ের সময় তাদের রাজনৈতিক রসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং সক্রিয়তার ভুল ব্যাখ্যা করা হতে পারে এই আশঙ্কায় ভারতীয় শিক্ষার্থীরা এখন কেবল পোস্টই মুছে ফেলছেন না বরং সোশ্যাল  মিডিয়া থেকে পুরো অ্যাকাউন্টও মুছে ফেলছেন। আবেদনকারীরা আশঙ্কা করছেন, তাদের ভিসা আবেদন বাতিল করার জন্য একটি সাধারণ মন্তব্য বা পোস্টও ক্ষতিকারক হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। ভিসা পরামর্শদাতারা সতর্ক করে দিচ্ছেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত বিষয়বস্তু লাইক বা শেয়ার করলেও ভিসা বাতিল হতে পারে। তারা এটাও বলছেন, হঠাৎ করে পোস্ট বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা কর্তৃপক্ষের সন্দেহের কারণ হতে পারে

Gradding.com-এর প্রতিষ্ঠাতা মমতা শেখাওয়াত ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, 'ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনকারীদের তাদের পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো সরবরাহ করতে বাধ্য করে, যাতে তারা সেই ছাত্রের চরিত্র মূল্যায়ন করতে পারে এবং আবেদনকারীর পেশাদার এবং শিক্ষাগত পটভূমি ভিসার উদ্দেশ্যের সাথে মেলে কিনা তা নির্ধারণ করতে পারে।

হাস্যরসাত্মক পোস্ট সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্তের বাইরে এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথ বলে বিবেচিত হবে না। ভিসা আবেদনের যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনৈতিক বা হিংসাত্মক সক্রিয়তা বা বিতর্কিত মন্তব্যের সামান্যতম ইঙ্গিতও সন্দেহজনক বলে গণ্য করা যেতে পারে।’

মমতা শিক্ষার্থীদের তাদের ডিজিটাল গতিবিধির  উপর সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, হঠাৎ করে কন্টেন্ট মুছে ফেলার ফলে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। তাই, পরামর্শ হলো ভারসাম্য বজায় রেখে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করা। মার্কিন সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো’কে  ‘সমর্থনকারী’ বলে অনুমেয় এমন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা শনাক্ত এবং বাতিল করছে। শিক্ষা পরামর্শদাতা মীনাল দামানি স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনকারীদের উদ্দেশে বলছেন, এমন পোস্ট লাইক, মন্তব্য বা শেয়ার করবেন না যার ভুল ব্যাখ্যা করা হতে  পারে। অনলাইনে রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগদান, পোস্ট করা বা জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকুন। এমনকি অন্য কারো মতামত শেয়ার করাকেও সমর্থন হিসেবে দেখা যেতে পারে। 

সুরজ (নাম পরিবর্তন করা হয়েছে)বলছেন যে, তিনি লিংকডিনে রাজনীতি নিয়ে খুব সোচ্চার ছিলেন, তাই তার ভিসা কাউন্সিলর সতর্ক করে দেয়ার পর তিনি তার অ্যাকাউন্টটি মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এটি তাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘সম্প্রতি আমাকে আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি আবেদন করার সাথে সাথেই বিক্ষোভে যোগ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। অনলাইনে একটি ছবি পোস্টও আমার ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় পোস্ট-ডক্টরেট অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত করার পর জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক পিএইচডি ছাত্র তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টটি মুছে ফেলেছেন। 

দ্য প্রিন্টের খবর মোতাবেক, ওই ছাত্রের মুছে ফেলা পোস্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিন-পন্থী বিষয়বস্তু, গাজায় হতাহতের পরিসংখ্যান এবং ক্রমবর্ধমান ডানপন্থী কর্তৃত্ববাদের উপর একটি নিবন্ধ।

সূত্র : এনডিটিভি