
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য এবং সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিতে তাদের একতরফা সিদ্ধান্ত ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এপ্রিল মাসে ভারত শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তারা ছোটখাট একটি যুদ্ধ করে ফেলেছে। বলা হচ্ছে বিদেশি হস্তক্ষেপে তা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছে। তবে ভারত তা অস্বীকার করে। ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে বার বার বলা হচ্ছে- যুদ্ধ শেষ হয়নি। পাকিস্তান এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে নালিশ জানাচ্ছে। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভারতের রাজস্থানে এক জনসভায় মোদি বলেন, ভারতের অধিকারে থাকা নদীর পানি আর পাবে না পাকিস্তান। প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে বড় মাশুল দিতে হবে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেবে, পাকিস্তানের অর্থনীতিও দেবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট করে দেন যে, ভারতের দৃষ্টিতে পানি চুক্তি আর অব্যাহত থাকবে না এবং এটি পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল হিসেবেই ব্যবহার করা হবে।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু নদের পানি চুক্তি ছিল দুই দেশের মধ্যে অন্যতম টেকসই ও সফল চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পূর্ব দিকের তিনটি নদীর (রবি, বিয়াস, ও শতদ্রু) পানি ব্যবহারের অধিকার রাখে এবং পশ্চিমের তিনটি নদী (সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলাম) প্রধানত পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত। এই পানির উৎস পাকিস্তানের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাকিস্তানের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ কৃষিজমি এই নদীগুলোর পানির ওপর নির্ভরশীল। তবে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, আপাতত এই সিদ্ধান্তে ‘তাৎক্ষণিক কোনও প্রভাব’ পড়বে না।
২২ এপ্রিলের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত কোন প্রমাণ উপস্থাপন না করেই পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এ নিয়ে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ১০ মে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও পরিস্থিতি এখনও অস্থির। এ অবস্থায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, যদি পাকিস্তান থেকে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়, তাহলে আমরা জবাব দেব, সন্ত্রাসীরা যেখানে থাকবে, আমরা সেখানেই আঘাত করব। এ বক্তব্যের পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উভয় দেশ একে অপরের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ, সীমান্ত বন্ধ এবং ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করার মতো একাধিক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ ক্রমাগত সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান সঙ্কট শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই অশনি সংকেত। পানির মতো মৌলিক ও মানবিক বিষয়ে চুক্তি বাতিল করে এটিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ, উভয় দেশকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন না করলে পরিস্থিতি যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।