Image description

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে আবারও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে কিছু কঠিন প্রশ্ন করেছেন। রাহুল দাবি করেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ‘ভেঙে পড়েছে’। তিনি বলেন, জয়শঙ্করকে ব্যাখ্যা করতে হবে কেন ভারতকে পাকিস্তানের কাতারে এনেছেন এবং কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তির মধ্যে ‘মধ্যস্থতা’ করতে বলেছেন।

আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজ দল কংগ্রেসের একটি পোস্ট শেয়ার করেন রাহুল গান্ধী। সেখানে ডাচ সম্প্রচারমাধ্যম এনওএসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পেহেলগামের হামলা ও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পরবর্তী উত্তেজনা নিয়ে কথা বলছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাহুল সেই ভিডিও শেয়ার করে বলেন, ‘জে জে (জয়চাঁদ জয়শঙ্কর) কি ব্যাখ্যা করবেন, কেন ভারতকে পাকিস্তানের কাতারে আনা হয়েছে? কেন একটি দেশও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেনি? কে ট্রাম্পকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে বলেছিল?’

লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল দাবি করেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ভেঙে পড়েছে।’ তাই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য অন্য দেশের সহায়তা নিতে হচ্ছে। তাঁর মতে, বিশ্বব্যাপী ভারতের অবস্থান এখন পাকিস্তানের কাতারে। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন পৃথিবীর কোনো দেশ সমর্থন করেনি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাহুল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ভারতের সম্মান ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ আনেন এবং তাঁকে প্রশ্ন করেন, কেন তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা বন্ধ করতে রাজি হয়ে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন।

রাহুল এক্সের এক পোস্টে বলেন, ‘মোদিজি, ফাঁকা বুলি আওড়ানো বন্ধ করুন। শুধু বলুন, কেন আপনি সন্ত্রাস দমনের বিষয়ে পাকিস্তানের কথা বিশ্বাস করলেন? কেন ট্রাম্পের কাছে নতি স্বীকার করে ভারতের স্বার্থ বিসর্জন দিলেন? কেন আপনার রক্ত ​​শুধু ক্যামেরার সামনে গরম হয়? আপনি ভারতের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন।’

এদিকে, কংগ্রেস নেতারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘জয়চাঁদ জয়শঙ্কর’ বলে তাচ্ছিল্য করছেন। ‘পৃথ্বীরাজ রাসো’ মহাকাব্যে ‘জয়চাঁদ’ নামে এক রাজপুত শাসককে মুহাম্মদ ঘোরীর সঙ্গে মিলে আরেক রাজপুত শাসক পৃথ্বীরাজ চৌহানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার কথা বলা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস নেতারা এই মন্তব্য করছেন। ‘পৃথ্বীরাজ রাসো’ মহাকাব্যে ‘জয়চাঁদ’কে একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে জানে ভারতের মানুষ।

সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক গৌরব পান্ধি বলেন, ‘যত দিন ‘‘জয়চাঁদ জয়শঙ্কর’’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকছেন, তত দিন তিনি ভারতের জাতীয় স্বার্থের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। তাঁকে অবিলম্বে পদ থেকে সরানো উচিত এবং তাঁর ব্যর্থতা তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত শুরু করা উচিত।’ কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ কেন অপারেশন সিঁদুর বন্ধ করল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।

পাক-ভারত সংঘাত নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ চলতি সপ্তাহে তীব্র হয়েছে। শাসক দল বিজেপি রাহুল গান্ধীকে ‘আধুনিক যুগের মীর জাফর’ আর বিরোধী দল জয়শঙ্করকে ‘নতুন যুগের জয়চাঁদ’ (বিশ্বাসঘাতক) বলে আখ্যায়িত করেছে। দুটি দলই অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তাদের মন্তব্যের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে বাক্যবাণ বিনিময় করছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম পোস্ট করছে, যেখানে প্রতিটি পক্ষই একে অপরকে দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতক বলে ইঙ্গিত করেছে।

এর আগে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর পাকিস্তানকে অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে আগে থেকে সতর্ক করেছিলেন। রাহুলের মতে, অপারেশন শুরুর আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করাটা ছিল ‘অপরাধ’। তবে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাহুলের এমন অভিযোগকে ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলেছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরুর আগে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল— এমন বিবৃতিটি ‘মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে’।