Image description
 

চলমান যুদ্ধাবস্থার মধ্যে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার ভোরে পাকিস্তানে ছোড়া ভারতের অন্তত ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এসব ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের বেশ কয়েকটি ছবিও গণমাধ্যমে এসেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, ভারতের সামরিক বাহিনীর ছোড়া বিস্ফোরকবাহী এসব ড্রোন ইসরায়েলের উৎপাদিত, যেগুলো ‘হেরোপ ড্রোন’ নামে পরিচিত। 

টিআরটি গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে  ইসরায়েল থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কেনে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার এবং যুদ্ধ ও নজরদারি ড্রোন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সমরাস্ত্র চুক্তিতেই হেরোপ ড্রোনের বড় আকারের চালান পেয়েছে ভারত।

 
 

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইএআই নির্মিত ‘হার্পি’ নামের একটি ড্রোনের উন্নত সংস্করণ ‘হেরোপ’। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যবর্তী প্রযুক্তি ‘লোইটারিং মিউনিশন সিস্টেম’ ব্যবহার করায় একই সঙ্গে এ ড্রোন নজরদারি ও হামলা চালাতে সক্ষম। নজরদারি ও আঘাত করায় এটি খুবই কার্যকরী বলেও জানা গেছে ড্রোনটি ব্যবহার করা দেশগুলোর দেওয়া তথ্যে।

 

হেরোপ ড্রোনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আকাশে দীর্ঘ সময় ঘুরে ঘুরে নিজ থেকেই শত্রুর অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। উন্নত ইলেকট্রো-অপটিক্যাল সেন্সর থাকায় রাডার স্টেশন, কমান্ড পোস্ট, ট্যাঙ্ক, ডিফেন্স সিস্টেম বা নজরদারি ঘাঁটি সহজেই শনাক্ত করা যায় এর মাধ্যমে। শনাক্তের পর প্রয়োজনে নিজ থেকেই ড্রোনটি শত্রু লক্ষ্যে গিয়ে আঘাত হানতে ও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

 

একটানা প্রায় ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে ঘুরে বেড়াতে পারে হেরোপ। লক্ষ্য খুঁজে নিয়ে যে কোনো দিক থেকে আঘাতও হানতে পারে। এটি আগে থেকে কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছাড়াই নিজস্ব সেন্সরের মাধ্যমে শত্রু চিহ্নিত করতে পারে। এমনকি জিপিএস ব্লক বা জ্যামিংয়ের সময়ও কাজ করতে পারে এ ড্রোন।

২০ থেকে ২৩ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে হামলা চালাতে পারে হেরোপ। মূলত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করলেও এটিকে অপারেটরের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রাখা হয়েছে। কোনো হামলার জন্য কমান্ড নির্ধারণ করে পাঠানোর পর, আক্রমণ বাতিল করে মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে এনে পুনরায় অন্য হামলায় ব্যবহার করা যায় হেরোপ ড্রোন।

ড্রোনটিতে আধুনিক ইলেকট্রো-অপটিক্যাল, ইনফ্রারেড ও রাডার চিহ্নিতকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আছে রঙিন ক্যামেরাও। ফলে বিভিন্ন আবহাওয়াতেও এটি নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে। ভূমি কিংবা ভাসমান  যে কোনো প্ল্যাটফর্মে ক্যানিস্টার থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য হওয়ায় দ্রুত মোতায়েন করা যায় হেরোপ ড্রোন। নিজেদের দাবি অনুযায়ী প্রকৃতপক্ষেই ২৫টি হেরোপ ড্রোন পাকিস্তান ভূপাতিত করে থাকলে, সেটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশটির আকাশযুদ্ধের বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হবে।