Image description

ভোলার চরফ্যাশনে ভুয়া শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে কলেজের সভাপতি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ আইচা কলেজের (সাবেক দক্ষিণ আইচা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজ) এডহক কমিটির সভাপতি ও দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির নেতা মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁনের বিরুদ্ধে।

সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী মিয়ার ছেলে। তবে চরফ্যাশনে বিএনপির কোনো কমিটি না থাকলেও নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন বলে জানা গেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে বি.বি.এ (সম্মান) ও এম.বি.এ (ব্যবসায় প্রশাসন) ডিগ্রিধারী দাবি করে ওই সার্টিফিকেট জমা দেন। সেই সনদপত্রের ভিত্তিতেই তিনি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। তবে সম্প্রতি যাচাই-বাছাইয়ে দেখা যায়, উক্ত দুটি সার্টিফিকেটই জাল।

গত ১ নভেম্বর দক্ষিণ আইচা রাব্বানীয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল বশার হেলালি নামের একজন লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সনদ যাচাইয়ের আবেদন করেন। পরে ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. একেএম শামসুর রহমান যাচাই শেষে ৫ নভেম্বর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সিরাজুল ইসলামের নামে প্রদত্ত সার্টিফিকেটে ক্রমিক নম্বর নেই, কোর্স কোডে অমিল রয়েছে, ভাইস চ্যান্সেলরের স্বাক্ষর জাল, এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরের তারিখেও গরমিল পাওয়া গেছে। তিনি প্রতিবেদনে উভয় সনদকে “ভুয়া” হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

এ তথ্য জানাজানি হলে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।

রাব্বানীয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল বশার হেলালি বলেন, “ভুয়া সনদ ব্যবহার করে কেউ যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বসে, তা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ভয়াবহ হুমকি। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ বলেন, সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল সভাপতি পদে আবেদন করেন। তার কাগজপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয় এবং অনুমোদনের পর তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী সনদ জাল প্রমাণিত হলে, আমরা বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

অভিযুক্ত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে বিষয়টি পরিষ্কার করব।

প্রতিবেদনের বিষয়টি জানতে ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চরফ্যাশন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর একেএম আবুল খায়ের বলেন, “ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কেউ কলেজ সভাপতির পদে থাকতে পারেন না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, “অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”