বর্তমানে অভিভাবকরা স্কুল বাদ দিয়ে কওমি মাদ্রাসার দিকে ঝুঁকছে বলে মন্তব্য করেছেন মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম। স্কুলে বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতিফলন না ঘটায় অভিভাবকরা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। একই সাথে এটিকে উদ্বেগজনক হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন সরকারের সাবেক এই জ্যেষ্ঠ সচিব।
আজ শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) শিক্ষা অধিকার সংসদ আয়োজিত ‘ইয়াং এডুকেটরস সামিট-২০২৫’ এর ‘রিইম্যাজিনিং এডুকেশন ইন বাংলাদেশ টু পয়েন্ট জিরো: ভিশন টুয়েন্টি থার্টি অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক মূল অধিবেশনে অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বক্তৃতাকালে খ ম কবিরুল ইসলাম বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় ঢেলে সাজাতে মূল্যবোধ ও প্রযুক্তির সমন্বয়ের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, শিশুরা এখন স্কুলে যাচ্ছে না। উদ্বেগজনক হচ্ছে তারা কওমি মাদ্রাসায় যাচ্ছে। উদ্বেগের কারণ এই যে, কওমি মাদ্রাসায় তো চাকরি নেই। তাহলে অভিভাবকরা পাঠাচ্ছেন কেন? কারণ তারা মনে করছেন, স্কুলে তাদের বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটছে না। এজন্য মূল্যবোধ এবং প্রযুক্তির সমন্বয় প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে সতর্কতার প্রয়োজনীয়তাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, কোন বয়সে কোন প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে, তা আমাদের ভাবতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সম্প্রতি একটি নীতি গ্রহণ করেছে যে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের অনেক ডিভাইস তারা দেবে না। অস্ট্রেলিয়াতে আমাকে এক গবেষক বলেছিলেন, অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে শিশুদের যোগাযোগ দক্ষতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং শিক্ষক ও অভিভাবকদের নির্লিপ্ততা ও অবহেলার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ধসে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, আমরা চাকরি করি সবাই, আমাদের ভিতরে কোনো মোটিভেশন নাই। একই সাথে ভোগবাদিতায় লিপ্ত হয়ে গেছি। অভিভাবকদের কাছে জ্ঞান অর্জনের চেয়ে জিপিএ ৫ মুখ্য হয়ে গেছে। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে শিক্ষা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যতটুকু বেঁচে আছে, তা ইনস্টিটিউশনাল না—ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু ক্ষেত্রে বেঁচে আছে। অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থার সমস্ত অংশীজনের মধ্যে আমি শিক্ষার্থীদের দোষ কম দেব।
শিক্ষকদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া ছাত্রকে টার্গেট করে ক্লাস নিন—ভালো ছাত্ররা ধীরে ধীরে শিখে যাবে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নায়েম মিলনায়তনে এই সামিট শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে সারাদেশ থেকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।