দেশের সর্বউত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়। জনসংখ্যা ১৩ লাখের কাছাকাছি। এই জনপদের মানুষ প্রকৃতিগতভাবে শান্তিপ্রিয়। সীমান্ত শহর হলেও এ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল তুলনামূলক ভালো। রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকসহ সামাজিক অপরাধের হারও কম। পঞ্চগড়ের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলও ছিল বেশ পরিচ্ছন্ন। যেখানে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ছিল; কিন্তু সংঘাত ছিল না।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বদলে যায় দৃশ্যপট। শুরু হয় ত্রাসের রাজত্ব। ক্ষমতার লোভ, অনিয়ম-দুর্নীতি, দখলবাজি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলা, হয়রানিসহ হেন অপকর্ম নেই যা করেনি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার।
৯৬-এর নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ জড়িয়ে পড়ে নানা ষড়যন্ত্রে। ২০০৮ সালে তাদের সেই মাত্রা দানবে রূপ নেয়। একক আধিপত্যে তারা রাজনৈতিক সব আদর্শকে পদদলিত করে জুলুম ও অত্যাচার শুরু করে। বিএনপি ও জামায়াতের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তারে ঘরবাড়িছাড়া হয়ে পড়েন এই দুই রাজনৈতিক দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী।
জেলা সদরসহ দুটি আসনের পাঁচ থানায় বিগত ১৫ বছরে বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে চার শতাধিক মামলা। আসামি করা হয় প্রায় ছয় হাজার নেতাকর্মীকে। এসব মামলায় বছরের পর বছর কারাভোগ করেছেন অনেকে। আবার অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে কেটেছে দিন-মাস-বছর। এসব মামলা চালাতে গিয়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। মিথ্যা ও প্রতিহিংসার এসব মামলা এখনো চলছে। ইতোমধ্যে কিছু মামলা প্রত্যাহার হলেও ঝুলে আছে অধিকাংশ মামলা।
এছাড়াও পঞ্চগড়ে ২০২৩ সালে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সঙ্গে তৌহিদি জনতার সংঘাত হয়। এতে পুলিশের গুলিতে আরিফ নামে এক বিএনপিকর্মী খুন হন। এছাড়াও একজনকে গুম করা হয়েছে। তার হদিস আজ পর্যন্ত মেলেনি। এ ঘটনায় দায়ের করা ২৩ মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষকে। যার অধিকাংশই ছিল বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী।
পঞ্চগড় জেলা জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আদম সুফি জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের শেষ সময়ে দমন-পীড়ন চালাতে বিভিন্নভাবে দায়ের করা ৫৪ মামলার মধ্যে ২৯টি মামলা ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। ঘরবাড়িছাড়া এসব নেতাকর্মী অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অনেকে মাসের পর মাস জেল খেটেছেন।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ইকবাল হোসাইন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা অনুসরণ করে আল্লাহর আইন মেনে আমরা গণমানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। হত্যা, গুম, খুন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি এসব আমাদের দলের মানুষ কখনোই সাপোর্ট করে না। ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের জঙ্গি সাজিয়ে অনৈতিকভাবে নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমি নিজেও এসব মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে ১০০ দিন জেলে ছিলাম। সাবেক আমিরসহ দলের বহু নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলহাজতে রাখা হয়েছিল।
জামায়াতে ইসলামীর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, জামায়াত নেতাকর্মীদের জঙ্গি সাজিয়ে একাধিক মামলা দায়ের করে তাদের তুলে এনে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসাতে পুলিশকে বাধ্য করা হয়েছে। দলের আনুগত্যসহ নানারকমের সুবিধা গ্রহণ করতে তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন সরকারের তাঁবেদারি করতে জামায়াত ও বিএনপি কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ তাদের হয়রানি করতে ছাড়েনি। গ্রেপ্তার এড়াতে শত শত বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরকর্মী ঘরবাড়িছাড়া হয়েছেন। সংসার, পরিবার-পরিজন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেক নিরপরাধ মানুষকে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মো. জাহেরুল ইসলাম কাচ্চু বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনের পুরো সময় ধরে জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়নের কথা মনে হলে শরীর শিউরে ওঠে। প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে গিয়ে তারা সীমাহীন নির্যাতন চালিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছে দলের নেতাকর্মীদের। যেতে দেয়নি দলীয় কার্যলয়ে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিএনপির দলীয় অফিস।
পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা পাঁচবারের পৌর মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কোনো কথা বলার সুযোগ পাইনি, দাঁড়াতে পারিনি কোথাও। দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সরকারের দোসররা। পঞ্চগড় সদর বিএনপির বিরুদ্ধে প্রায় দুই শতাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে আসামি করা হয় প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে। আমার নিজের নামেই ছিল সাত-আটটি মামলা। বিনা কারণে এসব দায়ের করা মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার করে ছয় মাস হাজতে রাখা হয়েছিল। এসব মামলায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও প্রশাসনের চাপে জেলহাজতে থাকতে হয়।
পৌরসভার শেষ নির্বাচনে তাকে জোর করে পরাজিত করা হয়। ভোটের দিনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শহরের চারটি ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে ভোট চুরি করে মেয়র নির্বাচিত করে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জাকিয়া খাতুনকে। ভোটের পর স্থানীয় ১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মোজাহারুল হক প্রধানের নেতৃত্বে তার নাতি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নোমান দলের সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা চালায় বিএনপির এই নেতার বাড়িতে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তার বাড়ি-গাড়িসহ সবকিছু।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এমপির মদতপুষ্ট হয়ে জাকিয়া খাতুন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। পৌরসভার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর পৌর উন্নয়ন বাজেট দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে লুটপাট করেন। জাকিয়া খাতুন ছিলেন মেয়র, তার স্বামী ছিলেন ঠিকাদার। পৌরসভার সব উন্নয়ন বাজেটের টেন্ডার, হাটবাজার ইজারাসহ আর্থিক খাতগুলোর নীতিনির্ধারকের কাজ করতেন মেয়রের স্বামী।
গত তিন বছরের মেয়রগিরি করে জাকিয়া খাতুন মালিক হয়েছেন স্থাবর-অস্থাবর অনেক সম্পদের। জেলা সদরে সুরম্য বাড়ি, ঢাকায় কিনেছেন ফ্ল্যাট, স্বনামে-বেনামে হয়েছেন সম্পদের মালিক।
চব্বিশের ৫ আগস্টের পর দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদ সরকারের বিনা ভোটের মেয়র, এমপি মো. মোজাহারুল হক প্রধান, মো. নুরুল ইসলাম সুজন, দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাটসহ দলীয় অনেক শীর্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। তাদের মধ্যে ২ আসনের সংসদ সদস্য ছাড়া আর কেউ গ্রেপ্তার হননি।
পঞ্চগড়ে আরিফ হত্যাকাণ্ড, ভ্যানচালক গুমসহ বিভিন্ন জুলুম-নির্যাতনের নেপথ্য হুকুমদাতা ছিলেন এরা। দেশের পটপরিবর্তন হয়ে এক বছর পার হলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের এই শীর্ষ নেতারা এখনো আইনের আওতায় আসেনি। কালোটাকার জোরে তারা গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলছে বলে অভিযোগ করেন এই সিনিয়র নেতা।
বিএনপি সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজার রহমান বাবু বলেন, মিথ্যা মামলা, জুলুম-নির্যাতনসহ বিভিন্ন কায়দায় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর ধারাবাহিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। একাধিক মামলার আসামি করা হয়েছে। পুলিশের অত্যাচারে আমরা বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি। বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোক ধরা পড়লে তাদের জামিন অনিশ্চিত হয়ে যেত। অনেক নেতাকর্মী বছরের পর বছর জেল খেটেছেন।
পঞ্চগড়ের দুটি আসনে দুই এমপির রাজত্ব
পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-১ আসন। এ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মো. মোজাহারুল হক প্রধান। উন্নয়নের নামে তিনি পুরো সময়ই নিজের আখের গুছিয়েছেন। দখলবাজি, টেন্ডারবাজি করে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। জেলার মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলোর একটিও তিনি পূরণ করতে পারেননি। নিজের সন্তান, আত্মীয়-স্বজনসহ দলের লোকজনকে করেছেন প্রতিষ্ঠিত। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এরপর থেকেই তিনি পলাতক।
পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-২ আসন। এ আসনের এমপি ছিলেন মো. নুরুল ইসলাম সুজন। এমপি হওয়ার পর হাসিনা সরকারের রেলমন্ত্রী হন তিনি। নিজের এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি তার আমলে। মন্ত্রিত্ব পেয়ে দলীয় লোকজন ছাড়া সাধারণ মানুষের কোনো উপকারে আসেননি তিনি। রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর শেষ বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। মন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে রেলের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তার স্ত্রী। রেলমন্ত্রী হয়ে রেলের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজের আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এক পর্যায়ে চলে যায় তার মন্ত্রিত্ব।
২০২৪ সালে বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন পঞ্চগড়-১ আসনে মো. নাঈমুজ্জামান মুক্তা। আটোয়ারীর বাসিন্দা তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চাকরি হারান তিনি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। কিন্তু সে বছর তাকে মনোনয়ন দেয়নি দল। তদবির করে শেষ মুহূর্তে পঞ্চগড়-১ আসনে ২৪-এর নির্বাচনে মনোনয়ন পান।
ভোটের আগে এলাকার পুরো রাজনৈতিক পরিবেশ কলুষিত করেন তিনি। টাকা দিয়ে দলীয় সন্ত্রাসীদের বড় একটি অংশকে নিজের দলে টানেন এই নেতা। ২৪-এর বিনা ভোটের নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় তোপের মুখে পড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। হত্যা মামলার আসামিসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জেলা আ.লীগ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের দুর্নীতি
আওয়ামী রাজনীতিতে পঞ্চগড়ে স্বনামধন্য নেতা ছিলেন আনোয়ার সাদাৎ সম্রাটের বাবা মো. নুরুল ইসলাম। তার মৃত্যুর পর বাবার অনুসারী হয়ে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেন সম্রাট। প্রথমে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পরে উপজেলা চেয়ারম্যান হন তিনি এবং দলের জেলা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। জেলা পরিষদ নির্বাচনে অর্থ দিয়ে ভোট কিনে হয়ে যান জেলা চেয়ারম্যান। দলের প্রভাব এবং জেলা চেয়ারম্যান পদে থেকে করেছেন ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি। জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা আগুনে পুড়িয়ে দেয় তার গাড়ি-বাড়িসহ অফিস।
বিনা ভোটের মেয়র জাকিয়া খাতুন
জাকিয়া খাতুন। পঞ্চগড় জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। পেশায় একজন স্কুলশিক্ষিকা। গত পৌর নির্বাচনে মেয়র হন। জনপ্রিয়তা, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না থাকলেও ভোট চুরি ও কেন্দ্র দখল করে ভোটে জেতেন তিনি। ক্ষমতা গ্রহণ করে পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি মো. মোজাহারুল হক প্রধানের মদতে পৌরসভাকে লুটপাটের রাজত্বে পরিণত করেন।
বার্ষিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় করে মাত্র দুবছরের মাথায় বনে যান অঢেল সম্পদের মালিক। তদবিরবাণিজ্যসহ নানা মিশনে পড়ে থাকতেন মন্ত্রণালয়ে। তার স্বামী ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী। মেয়রের অনুপস্থিতিতে তিনিই ছিলেন পৌরসভার স্বঘোষিত মেয়র। জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা মেয়র জাকিয়ার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। হত্যা-গুমসহ একাধিক মামলার আসামি জাকিয়া খাতুন বর্তমানে গাঢাকা দিয়ে আছেন।
আ.লীগের দখলবাজি
জেলাজুড়েই ছিল আওয়ামী লীগের এমপি ও দলের নেতাকর্মীদের দখলবাজি, টেন্ডারবাজি। সরকারি অফিস-আদালতের টেন্ডার দখলে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করে নেওয়া, সরকারি বরাদ্দের বড় কাজ নিজেদের লোকের নামে নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি, সরকারি রাস্তার গাছ, পাথর, বালুমহাল, সরকারি খাসজমিসহ পুকুর, খাল-বিল সবকিছুই ছিল তাদের কবজায়। সাধারণ মানুষের জায়গাজমি জবরদখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, সড়ক-মহাসড়কের কাজে হস্তক্ষেপ করে অর্থ আদায়Ñসবই হতো স্থানীয় দুই এমপির নির্দেশে।
পুলিশ ও প্রশাসন চলত তাদের কথায়। দলীয় সরকারকে খুশি করতে সে সময় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিচার বিভাগ, সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ ছিল না। নিজেদের স্বার্থে তারা সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পঞ্চগড়ের পাঁচ শহীদ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে পঞ্চগড় জেলার পাঁচজন শহীদ হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাজু ইসলাম। তার বাবা মো. আজাহার আলী, ছিলেন গার্মেন্টকর্মী। তিনি শহীদ হন ১১ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলায়। মো. সুমন ইসলাম, পিতা মো. হামিদ আলী, তিনিও ছিলেন গার্মেন্টকর্মী। শহীদ হন ঢাকার আশুলিয়ায়। সাগর রহমান, পিতা মো. রবিউল ইসলাম; তিনি ইন্টারনেট সেবাদান প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। শহীদ হয়েছেন মেরুল বাড্ডা, ঢাকায়। মো. শাহাবুল ইসলাম শাওন, পিতা মো. আজাহার আলী, তিনি কাঁচামাল ব্যবসায়ী ছিলেন। শহীদ হয়েছেন সাভারের বাইপাইলে। মো. আবু সায়েদ, পিতা আব্দুল খালেক, পেশায় ছিলেন রিকশাচালক। তিনি শহীদ হন ঢাকার মোহাম্মদপুরে।
দীর্ঘ ১৫ বছরে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার যে নৈরাজ্য গড়ে তুলেছিল, তা একটি স্বাধীন দেশে বিরল ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। অত্যাচারী শাসক দলের দোসররা খুন, ধর্ষণ, দখলবাজি করেছে বেশুমার। যার ধারাবাহিকতা সীমান্তের এই জেলাতেও বাদ যায়নি। ছাত্র-জনতার সমন্বিত আন্দোলনের পর ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। হত্যা, লুটপাট, জুলুম-নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে পঞ্চগড় জেলায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও রাঘব বোয়ালরা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন শিথিলতা জেলার সাধারণ মানুষের কাছে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।