Image description

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের  সবচেয়ে ভরসার চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন। এদের কেউ সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন। কেউ কেউ স্বজনদের শোক সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। সেজন্য এখানে হাসি-কান্না সহোদরের মতো থাকে। এমনই সংবেদনশীল স্থানে সম্প্রতি চালানো হলো সিনেমার প্রচারণা। অবশ্য এজন্য ‘দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ’ ব্যানারকে রাখা হয়েছে সামনে। 

নির্বিঘ্নে রোগীদের সেবা দেওয়ার স্থান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চত্বরে সিনেমার এমন প্রচারণা নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

গত বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে জরুরি বিভাগের বার্ন ইউনিট ও ক্যাজুয়ালটি ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় একটি ভ্যান নিয়ে বাংলা নতুন সিনেমা ‘গোয়ার’-এর প্রচারণা শুরু হয়। ভ্যানের চারদিকে পোস্টার লাগিয়ে ঘণ্টা দুয়েক অবস্থান করা হয়। প্রচারণায় সিনেমার টিমের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এই কার্যক্রম চালানো হয়েছে বলে প্রচারণা দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সিনেমাটির অভিনেতা রাসেল মিয়ার ফেসবুক আইডিতে সেদিন সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত ভিডিসহ পোস্ট দেখা যায়। পোস্টে তিনি বলেন, “আগামী ১৪ নভেম্বর আমাদের সিনেমা ‘গোয়ার’-এর মুক্তি উপলক্ষে আজ দুপুর ২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গরিব ও দুস্থ রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের খাবার দিয়ে মেহমানদারি করা সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। আজকের আয়োজনে যাঁরাই পাশে থেকে আমাদের সহযোগিতা করেছেন, আপনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।” 

ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনদের একটি টোকেন দিয়ে বলছেন, ‘এই টোকেন দিয়ে দুপুর ২টার সময় গেট থেকে গিয়ে খাবার আনবেন’। 

যদিও হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ঢামেক থেকেই সরকারিভাবে খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এমন প্রচারণায় রোগী ও তাদের স্বজনরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এটা হাসপাতাল, বিনোদন কেন্দ্র নয়। এখানে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসেন। তাদের অনেকের অবস্থা ভালো থাকে না। সিনেমার প্রচারণায় এভাবে জটলা পাকানো সমীচীন নয়।

এছাড়া প্রচারণার সময় ভিড়ের কারণে হাসপাতালে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ যানবাহনের চলাচলেও বিঘ্ন দেখা যায়।

অনেকে বলেন, দুস্থদের খাবার বিতরণের সদিচ্ছা থাকলে ফুটপাতসহ বিভিন্ন বঞ্চিত এলাকায়ও করা যেত। হাসপাতাল এলাকায় এ ধরনের অযাচিত জটলাই অনুমোদিত নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অবশ্যই হাসপাতাল কোনো বিনোদন কেন্দ্র নয়। এই ধরনের অনুমতি কাউকেই দেওয়া হয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগে চলচ্চিত্র পরিচয় দিয়ে কেউ দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরকারিভাবে তিনবেলা খাবার সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া হাসপাতাল চত্বর তা বিতরণের স্থান নয়।