বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক বিরোধের জেরে হামলায় এক বিএনপি নেতার হাতের তিন আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রোববার বিকেলে উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়ির সামনে হামলার শিকার হন আবুল হোসেন ফুয়াদ জমাদ্দার (৪৫) নামের ওই ব্যক্তি। তাঁর স্বজনরা জানিয়েছেন, প্রতিবেশী ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মাওলা জমাদ্দারের নেতৃত্বে ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফুয়াদ জমাদ্দারকে কুপিয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।
আহত ফুয়াদ জমাদ্দার পাথরঘাটার কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত হালিম জমাদ্দারের ছেলে। তিনি কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁর ওপর হামলায় নেতৃত্বদানকারী গোলাম মাওলা জমাদ্দার ছাত্রলীগের কাকচিড়া সাংগঠনিক থানার প্রচার সম্পাদক পদে আছেন।
ঘটনার প্রতাক্ষদর্শী ফুয়াদের চাচাতো বোন শাহানা বেগমের ভাষ্য, গোলাম মাওলা ও ফুয়াদ প্রতিবেশী। রোববার আসরের নামাজের কিছুক্ষণ আগে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় ফুয়াদকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় গোলাম মাওলা। আধা ঘণ্টা পর বাড়ির সামনের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ফুয়াদ বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় গোলাম মাওলার নেতৃত্বে ৭-৮ জন মিলে ফুয়াদের ওপর হামলা করে। তারা ধারালো রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে।
শাহানা বেগম তখন গোলাম মাওলাকে জাপটে ধরে ফুয়াদকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তাদের চাপাতি ও বঁটি দায়ের কোপে ফুয়াদের হাতের তিনটি আঙুল ঘটনাস্থলেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়– জানিয়ে শাহানা বলেন, এ সময় তাঁর শরীরের ৮-১০টি জায়গায় কোপের চিহ্ন দেখতে পান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গোলাম মাওলাকে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তাঁর বেশিরভাগ স্বজনই ঘটনার পর থেকে পলাতক বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। গোলাম মাওলার ফুফু তাসলিমা বেগম বলেন, ‘তাঁর ভাই ইউসুফ জমাদ্দার (গোলাম মাওলার বাবা) ও ফুয়াদ জমাদ্দারের মধ্যে টাকা ও জমিসংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তিন-চার দিন আগে ইউসুফ ও তাঁর ছোট ছেলে অনিক জমাদ্দারকে মারধর করেন আবুল হোসেন জমাদ্দার। এ ঘটনার জেরে আবুলের ওপর হামলা হতে পারে বলে তাঁর ধারণা।’
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মো. ফারুকের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাকচিড়া বাজারে গোলাম মাওলার নেতৃত্বে শেখ হাসিনার পোস্টার লাগানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ফুয়াদের নেতৃত্বে বাজারে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। এরই জেরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে আবুল হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গোলাম মাওলার বাবা ইউসুফ জমাদ্দার বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আবুল হোসেনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আটকে পুলিশের অভিযান চলছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত কেউ মামলা করেননি।