ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেই বিদেশে সরকারি খরচে লাগাম টানেন। সেই পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) রোহিঙ্গা সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের বাকি সব কার্যক্রম আপাতত তিন মাসের জন্য গুটিয়ে নিয়েছে। এক সপ্তাহ আগের এই আদেশের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা, পরিবেশ, জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও গতি হারিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েছে কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে চাপে থাকা বাংলাদেশকে আরও বড় ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অর্থনীতির ক্ষতগুলো সামনে আসে, যা সামলাতে খেই হারাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাত ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিশাল জনগোষ্ঠী।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই সিদ্ধান্ত দেশের জন্য উদ্বেগের বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, উন্নয়নে বিশেষ করে কারিগরি সহায়তায় দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়বে। এ জন্য এখন থেকেই নিতে হবে কূটনৈতিক উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তাদের এটি বোঝাতে হবে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সহযোগী দেশ।
৫০ বছরে ইউএসএআইডির অবদান
মার্কিন তহবিল পাওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের অংশীদার বাংলাদেশ। ৫০ বছরেরও বেশি সময় জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ খাতে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে ইউএসএআইডি। তাদের অনুদান পাওয়া অনেক এনজিও এবং সরকারি সংস্থা রয়েছে। ইউএসএআইডি গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশকে প্রায় ২০ কোটি ২২ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দেওয়ার চুক্তি করে। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১-২০২৬ সালের জন্য বাংলাদেশ ও ইউএসএআইডির মধ্যে একটি নতুন ডিওএজি (ডেভেলপমেন্ট অবজেক্টিভ গ্র্যান্ট অ্যাগ্রিমেন্ট) সই হয়। এর মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ইউএসএআইডি। পঞ্চম সংশোধনী পর্যন্ত ইউএসএআইডি সাড়ে ৪২ কোটি ডলার দিয়েছে। ১৯৭৪ সালে সই হওয়া ‘অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত ও সম্পর্কিত সহায়তা’ চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন খাতে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি তহবিল দিয়েছে।
‘ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্স ডট গভ’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে ২০২১ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালের ৪৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর ওয়াশিংটন বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। গেল কয়েক বছরে মার্কিন সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ দশে ছিল বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য খাতে বড় ধাক্কা
যুক্তরাষ্ট্র এইচআইভি, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা রোগের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এতে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থের অভাবে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কর্মসূচি অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) কর্মকাণ্ড এমনিতেই গত সাত মাস বন্ধ আছে। এতে ২০ হাজারের বেশি কর্মীর বেতন বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিতে স্বাস্থ্য খাতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে এইচআইভি-এইডস, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া অপুষ্টিজনিত নানা সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই সরকারের উচিত হবে চলমান প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে বিরূপ প্রভাব এড়াতে নতুন কর্মকৌশল তৈরিতে কাজ করছে সরকার। তবে কিছু প্রকল্পে কাটছাঁট হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউএসএআইডি বাংলাদেশ সরকারকে সরাসরি অর্থায়ন কম করে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের নানা রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাটি। দেশে রোগ প্রতিরোধী টিকায় সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা দেয় তারা। করোনাকালে কম দামে টিকা দেওয়াসহ ৬৪ জেলায় ৫০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ দেয় সংস্থাটি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৮ কোটি ৪০ লাখ টিকা সহায়তা দিয়েছিল। এ ছাড়া করোনা-পরবর্তী মানসিক উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তায় ১৪ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক সংস্থা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ৪০০ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে দেশটি। শুধু টিকা নয়, নানা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে দেশে ইউএসএআইডি সহায়তায় এখনও অনেক প্রকল্প চলমান, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক আদেশে স্থবির হয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সহায়তা বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আইসিডিডিআর,বি হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে। এতে স্বাস্থ্য খাতে বড় বড় গবেষণা বন্ধ হয়ে যাবে। সেবায় বড় প্রভাব পড়বে। তাদের তহবিলে পরিচালিত হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বঞ্চিত হবেন লাখ লাখ রোগী। বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধী টিকায় বেশি অর্থায়ন করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। টিকা পেতে জটিলতা দেখা দেবে, বিশেষ করে দু-তিন মাস আগে যেসব প্রকল্প শুরু হয়েছে, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নগর স্বাস্থ্য উন্নয়নে তিন মাস আগের প্রকল্প ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে পুষ্টি-সংক্রান্ত দুটি প্রকল্পও। যক্ষ্মার দুটি প্রকল্প আছে, সেগুলো চালু থাকবে কিনা, এখনও পরিষ্কার নয়। এসব প্রকল্প বন্ধ হলে একদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি হারাবেন, অন্যদিকে এসব প্রকল্পের সুবিধাভোগী মানুষও উপকার পাবেন না।
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সায়কা সিরাজ বলেন, পুষ্টিবিষয়ক বেশ কয়েকটি প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেয়ে আসছে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল। তবে বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রম কম। বর্তমানে দেশে আনুমানিক দেড় লাখ শিশু খর্বাকৃতির হয়ে থাকে, কার্যক্রম বন্ধ হলে এটি আরও বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যক্ষ ডা. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, অধিদপ্তরের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার খুব বেশি সম্পর্কে নেই। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বিভিন্ন প্রকল্প চলমান, এগুলোতে প্রভাব পড়বে। কর্মসূচি স্থগিতের কারণে সংক্রামক রোগ বাড়তে পারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩৬ উন্নয়ন কর্মসূচি অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) সাত মাস ধরে বন্ধ। এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। এ ছাড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে টিকাদান, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইনের মতো জাতীয় কর্মসূচি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, মার্কিন অর্থায়ন সরকারের অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে সরকার নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণে কাজ করছে।
খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ও পরিবেশে প্রভাব
ইউএসএআইডির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়ার সুযোগ মেলে প্রকল্পের আওতাধীন প্রান্তিক মানুষের। এ ছাড়া জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়নেও সহায়তা করে তারা। দক্ষিণাঞ্চলে ২৩ জেলায় এমন প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবেশ ও জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা উন্নয়নে কাজ করার কথা বলছে ইউএসএআইডি, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে। সব প্রকল্পই এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ইউএসএআইডির স্থগিতাদেশ সাময়িক। এই নির্দেশনা গোটা বিশ্বের জন্য। আমরা নির্দেশনার পর বৈঠক করেছি। ইউএসএআইডি কৃষিতে কিছু প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে। বেশির ভাগ কারিগরি সহায়তা। কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত চূড়ান্ত নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নেব।
শিক্ষা, মানবাধিকার, এনজিও খাতের প্রকল্প ঝুঁকিতে
স্বাধীনতার পর থেকেই প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো। বিদেশি অর্থায়নে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে তারা। এসব প্রকল্পে বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন। বাংলাদেশে সুশাসন ও জবাবদিহি বাড়াতেও ইউএসএআইডির বিভিন্ন প্রকল্প চলমান ছিল। সংস্থাটির মতে, সরকারের প্রতি নাগরিকদের আস্থা বাড়াতে এবং মানবাধিকার রক্ষায় সহায়ক এসব প্রকল্প। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউএসএআইডির কর্মসূচি পরিচালিত হতো। শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করে তারা। এসব প্রকল্প এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
কর্মসূচির পরিধি ও বিপুল কর্মী সংখ্যার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি ও অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে পরিচিত ব্র্যাক। বাংলাদেশভিত্তিক সংস্থাটির কাজ রয়েছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর বাংলাদেশসহ চারটি দেশে ৯টি কর্মসূচি স্থগিত করেছে ব্র্যাক। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, বাংলাদেশে মার্কিন অর্থায়নের ছয়টি প্রকল্প স্থগিত করেছেন তারা। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প সরাসরি আমরা বাস্তবায়ন করি, তিনটি অন্য এনজিও দিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান ও লাইবেরিয়াতে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের চলমান তিনটি প্রকল্পও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ডাইভারসিটি ইনক্লুশনের (বৈচিত্র্যের অন্তর্ভুক্তি) প্রজেক্ট থাকলে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমাদের নির্দিষ্টভাবে ডাইভারসিটি ইনক্লুশনের প্রোগ্রাম নেই। ফলে একেবারে বন্ধ বা বাতিল করতে হয়নি। কিন্তু সরাসরি অর্থায়নের প্রকল্পগুলো আপাতত স্থগিত রাখতে হয়েছে। এসব প্রকল্প থমকে যাওয়ার কারণে অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে জানান তিনি।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, যদি পর্যালোচনার পর প্রকল্পগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়, সেটি ছোট এনজিওর জন্য একটা বড় ধাক্কা হবে। অবশ্য এখনই সব শেষ হয়ে গেল এমন ভাবার পক্ষে নন আসিফ সালেহ। তিনি বলেন, খারাপটা চিন্তা করেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এখনই সব বন্ধ করে দিতে হবে, এমন না। প্রকল্প পর্যবেক্ষণের জন্য তিন মাস সময় পাওয়া গেল। আগামী তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এগুলোর প্রভাব আমাদের বোঝাতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল আরেকটি উন্নয়ন সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের দুটি প্রকল্প আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কয়েকজনকে হোম অফিস করতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সবার মাঝে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
কারা কী বলছেন
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা বিশ্বের দুটি দেশ বাদে সবার জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে সহযোগিতা, তার ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা এটা তিন মাস পর রিভিউ করবে। মোটকথা, এটা চাপ সৃষ্টিরও কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। তারা বিভিন্ন সংস্থাকে সহযোগিতা করে। সেসব সংস্থা আবার বিভিন্ন দেশে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করে। এখন এসব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আবার অনেকেই তিন মাস পর যখন কার্যক্রম শুরু করবে, তখন পিকআপ করার মতো অবস্থায় নাও থাকতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন দেশ চাইবে যাতে রিভিউটা ইতিবাচক হয়। তাই আমাদের এখানে কূটনৈতিক উদ্যোগের বিষয় আছে। আমাদের বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। সেটা ঢাকায় করতে হবে, ওয়াশিংটনেও করতে হবে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তিন মাস নিলেও বাংলাদেশের জন্য এখনই একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জলবায়ু বা জেন্ডারের মতো ইস্যুতে ট্রাম্পের যে অবস্থান, তাতে রিভিউর পরও এ-সংক্রান্ত সহায়তার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ছোট ছোট উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে সরাসরি আঘাত আসতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজার) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা কার্যক্রম তিন মাসের বেশি বাড়ায়, তাহলে আমাদের পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটে ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে প্রভাব ফেলবে। এ জন্য সরকারকে এখন থেকেই সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।