Image description
 

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে চলতি বছরেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। একই দাবিতে একাট্টা দলটির মিত্ররাও। এ লক্ষ্যে সারাদেশে নির্বাচনী ঢেউ তুলতে আগামী মাস (ফেব্রুয়ারি) থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার শেষে চলতি বছরের মধ্যে যাতে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা দেয়, সেই চাপ তৈরি করতে ধারাবাহিক কর্মসূচি করবে দলটি। গত সোমবার রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সভাসূত্র। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই দিন সভাটি মুলতবি করা হয়। আজ বুধবার আবার স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, দ্রুত নির্বাচন জাতির জন্য জরুরি। এই ধরনের সরকার যত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবে, তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে। কারণ, এটা তো নির্বাচিত সরকার নয়। বিএনপিও সংস্কার চায়। তবে, সেটা যৌক্তিক সময় হতে হবে। এসব না করতে পারলে সমাজ পরিবর্তন করা যাবে না। এর মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে (জুলাই-আগস্ট) নির্বাচন দাবি করেছে বিএনপি।

গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বলেন, দেশের স্বার্থে জাতীয় নির্বাচন খুব-ই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য আমাদের কাছে নির্বাচন আদায় করে নেওয়া মূল লক্ষ্য। এই দাবির সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মসূচি করা হবে। উদ্দেশ্য, সারাদেশে নির্বাচনি ঢেউ তৈরি করা, যেন সরকার দ্রুত সময়ে মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি প্রথমে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ইস্যু নিয়ে মাঠে নামবে। এরপর সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবি তুলবে। দ্রুত নির্বাচনের জন্য বিএনপি যে দাবি জানিয়ে আসছিল, সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতে দ্বিতীয় কর্মসূচি করবে তারা। সূত্র জানায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও চলতি বছরের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রমজান শুরুর আগেই ঢাকাসহ দেশব্যাপী সমাবেশ করবে বিএনপি। শিগগিরই বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে দলের মহাসচিব কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

বিএনপি নেতারা বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নেওয়া মিত্র ডান, বাম ও ইসলামপন্থি দলগুলোকে তারা ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। সর্বশেষ গত সোমবার বিএনপি মহাসচিব বৈঠক করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে খেলাফত মজলিস, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তবাদী সমমনা জোট, এলডিপিসহ একাধিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তবে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির কথা-বার্তায় দৃশ্যত একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। দলটি মনে করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বড় অংশ জামায়াতে ইসলামীর কথায় পরিচালিত হচ্ছে। এই অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে কোনো ধরনের দ্বন্দ্বে জড়াবে না বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, গত সোমবারের বৈঠকে ছাত্রদের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ছাত্ররা বিএনপির কাছে ওই ঘোষণাপত্রের যে খসড়া পাঠিয়েছে, সেটি নিয়ে নেতারা আলোচনা করেছেন। ওই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন থাকলেও ছাত্রদের এই উদ্যোগকে সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করতে চায় না দলটি। সে কারণে ছাত্রদের প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে বাস্তবতার নিরিখে খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিবর্তন আনার পক্ষে বিএনপি।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, ’৭২-এর সংবিধান যে মূলনীতির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, সেই মূলনীতি স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া। সে ক্ষেত্রে ’৭২ এর সংবিধান বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। সেখানে যদি কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন প্রয়োজন হয়; সেটি করা যেতে পারে। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির ছাত্রনেতারা ঘোষণাপত্রে ’৭২-এর সংবিধানকে বাতিলের যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, সেটি যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মনে করে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, মহান মুক্তিযুদ্ধই বাংলাদেশের ভিত্তি। আরও অনেক অর্জন রয়েছে। ঘোষণাপত্রে সেগুলোরও প্রসঙ্গ থাকবে। এ ছাড়া গণতন্ত্রের জন্য গত ১৭ বছরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে সংগ্রাম, ত্যাগ-ঘোষণাপত্রে সেগুলোও সংযুক্ত করবে দলটি।

জানা গেছে, ছাত্রদের প্রস্তাবিত খসড়া ঘোষণাপত্রকে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধন করেছে বিএনপি। এই নিয়ে আজ বুধবার আবারও স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে। এরপর সংশোধনকৃত খসড়া নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলের মতামত নেবে বিএনপি। পরে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে সরকার আলোচনায় ডাকলে ‘শরিকদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরিকৃত খড়সা’ সরকারকে দেবে বিএনপি।

ছাত্রদের খসড়া ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে- এটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে এটি এভাবে দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করে না বিএনপি। দলটির অভিমত, গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় ছয় মাস হতে চলেছে। এখন ব্যাকডেট ধরে এটি ঘোষণা করা হাস্যকর হবে। তাই এটা প্রোক্লেমেশন নয়, গণ-অভ্যুত্থানের ডিক্লারেশন হতে পারে। আর রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে এটা ঘোষণা করা হবে; সেক্ষেত্রে কোনো ব্যাকডেটের প্রয়োজন নেই।