বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ও দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে উঠে আসা বিএনপির এই চেয়ারপারসনের রাষ্ট্রপরিচালনার তিনটি অধ্যায় সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
১৯৯১ সালের ২০ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বেগম খালেদা জিয়া। মুসলিম বিশ্বে পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টোর পর তিনিই ছিলেন দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। তার এই মেয়াদের অন্যতম সাফল্য ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন। ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১-এ তিনি দ্বাদশ সংশোধনী বিলে স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসে।
দ্বিতীয় মেয়াদ (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬)
বেগম খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদটি ছিল খুবই স্বল্পস্থায়ী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।
তবে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এই সংসদ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করা হয়। এরপর ৩০ মার্চ ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। এই মেয়াদে তিনি মাত্র ১২ দিন (১৯ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ) দায়িত্ব পালন করেন।
তৃতীয় মেয়াদ (২০০১-২০০৬)
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বেগম খালেদা জিয়া। এই নির্বাচনে জোটগতভাবে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি। বিএনপি এককভাবে ১৯৩টি এবং জোটগতভাবে ২১৬টি আসন লাভ করে।
২০০১ সালের ১০ অক্টোবর তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এই মেয়াদে তিনি পূর্ণাঙ্গ ৫ বছর দেশ পরিচালনা করেন এবং ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি মোট পাঁচবার (১৯৯১, ১৯৯৬-এর ফেব্রুয়ারি ও জুন, ২০০১ এবং ২০০৮) তিন থেকে পাঁচটি করে আলাদা আসনে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে সব আসনে জেতেন। এবং তিনি কখনো কোনো আসনে হারেননি; যা দেশের ইতিহাসে একটি বিরল রেকর্ড।