জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি জোট করা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অন্তকোন্দল এখন প্রকাশ্যে। গতকাল পর্যন্ত দলটির অন্তত পাঁচজন নেতা পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ৩০ নেতা চিঠি দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে। গতকাল রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটকে সমর্থন জানিয়েছেন এনসিপির ১১৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে আর পদত্যাগের জোয়ারে শুরুতেই হোঁচট খায় তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। তবে একের পর এক পদত্যাগের ঘটনায় দলে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। এদিন দলটি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে একথা বলেন।
জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোট নিয়ে গতকাল পর্যন্ত এনসিপির পাঁচ নেতা পদ ছাড়লেও তাসনিম জারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। পদত্যাগ করা নেতারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এনসিপি যে রাজনৈতিক সমঝোতায় যুক্ত হয়েছে, তা আপমর দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে দল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। এর মধ্যে সবার আগে পদত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক। এরপর ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও দলটির নেতা এবং ফেনী-৩ আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আবুল কাশেম। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন পদত্যাগের বিষয়ে নিজের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, এনসিপি-জামায়াত জোটের প্রক্রিয়া রাজনৈতিক কৌশল হলেও বাস্তবে এটি ধাপে ধাপে সাজানো একটি পরিকল্পনা। তবে তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না এবং সব সমর্থকদের পাঠানো ডোনেশন ধীরে ধীরে ফেরত দেবেন। দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি জোট করায় অসন্তুষ্ট বলে পদত্যাগ করেছেন। তবে তিনি ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। দলের নেতাদের একের পর এক পদত্যাগের বিষয়ে দলীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, কয়েকজনের পদত্যাগে দলের সাংগঠনিক শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এনসিপি একটি আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল। এখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জামায়াতের সঙ্গে বহু বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তবে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি।
জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি জোটের বিষয় বিরোধিতা করে শনিবার চিঠি দেন ৩০ নেতা। তারা জানান, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর বিগত এক বছর জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের বিভাজনমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, অন্যান্য দলের ভিতরে গুপ্তচরবৃত্তি করে এনসিপির ওপর বিভিন্ন অপকর্মের দায় চাপানোর অপচেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় করা দলটির কর্মকা নিয়ে তারা স্পষ্ট করেনি। তাই তাদের সঙ্গে জোটে যেতে আমাদের দলের মূল্যবোধের সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া জামায়াতের সঙ্গে জোটের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জোটে যুক্ত না হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে নতুন দল গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ফেসবুকে লেখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না। তার রাজনৈতিক অবস্থান বা দর্শনসহ কোনো সহযোগিতা বা সমঝোতায় যাওয়া এনসিপিকে কঠিন মূল্য চুকাতে হবে।
দল থেকে পদত্যাগ না করলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। তবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটের বিষয় সমর্থন জানিয়ে ১১৪ জন এনসিপির নেতা দলের আহ্বায়কের কাছে চিঠি লেখেন। চিঠিতে এনসিপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, আমরা দলীয় আদর্শ, লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ কৌশলগত অবস্থানকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে এ মতামত পেশ করছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে টেকসই করা এবং একটি জনমুখী ও দায়বদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিকভাবে সময়োপযোগী ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।
নেতারা আরও উল্লেখ করেন, দলীয় ও জাতীয় স্বার্থে এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের বৃহত্তর লক্ষ্যকে সামনে রেখে এনসিপি যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতা কিংবা জোট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তবে সে বিষয়ে তাদের পূর্ণ সমর্থন ও সম্মতি রয়েছে।