Image description

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হাদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও খুনিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দেশ। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের মতে, এটি শুধু একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড কিংবা অপরাধ নয়; বরং এর পেছনে লুকিয়ে আছে গভীর ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বা ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি গ্রহণ করেছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সতর্ক ও শান্ত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন কেউ উসকানি দিয়ে নতুন কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে। বিশেষ করে ২৫ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক মুহূর্তটি সফল করতে এবং নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূলে রাখতে তারা বদ্ধপরিকর।

জানা যায়, দেশের চলমান অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে গত শুক্রবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে নেতারা আলোচনায় বলেন, ওসমান হাদিকে গুলির পর তার মৃত্যু এবং মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলেই মনে করি। শান্তিকামী দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দেশকে আমরা ধ্বংস হতে দেবো না। এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে নৈরাজ্যবিরোধী সব রাজনৈতিক সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অবিলম্বে ওসমান বিন হাদিকে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানায় বিএনপি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। একদিকে জনমনে আতঙ্ক, অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা—এই দুইয়ের মাঝে বিএনপি একটি ‘ওয়াচডগ’ বা সতর্ক প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করা জরুরি। তা না হলে সংকট কোনদিকে যাবে, সেটি বলা মুশকিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গতকাল কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে কতিপয় রাজনৈতিক দল ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে, পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে। এদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বাংলাদেশে আসবেন—এই ঘোষণার পরে একটা হত্যাকাণ্ড হলো। তারপর কয়েকটা ধারাবাহিক ঘটনা ঘটল। এটার মানে হলো, এটা একটা সাজানো ছক।

তিনি বলেন, যত ষড়যন্ত্রই হোক, আমাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবই। এই দেশে নির্বাচন হবে, নির্বাচন হতে হবে। অস্থিতিশীল করার মতো ঘটনা আমরা ঢাকা শহরে হতে দেবো না। যারা করতে আসবে তাদের আমরা প্রতিহত করব। কেউ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে জবাব দেব।

জানা গেছে, ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠে নানা ধরনের সন্দেহ দানা বাঁধছে। সাধারণ মানুষের মনে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন রেখে বলেছেন, নির্বাচন বানচাল করতে কোনো তৃতীয় পক্ষ কি পর্দার আড়ালে কাজ করছে? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হলেও সার্বিকভাবে বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্ব ও ধৈর্যের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। দলের দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে পরিষ্কার যে, তারা কোনোভাবেই নির্বাচন বিলম্বিত হওয়া বা বাধাগ্রস্ত হওয়া মেনে নেবে না। সেইসঙ্গে ২৫ ডিসেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি নির্বিঘ্ন করতে বদ্ধপরিকর। বিএনপির বর্তমান অবস্থান হলো—পরিস্থিতির সবদিক সার্বিক নজরদারি। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সতর্ক থাকা। বিএনপি মনে করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার জন্য একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়ার একমাত্র পথ হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যে কোনো মূল্যে সময়মতো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে তারা অনড়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র রয়েছে। সেইসঙ্গে নির্বাচন পেছানোর জন্য পতিত শক্তির সঙ্গে দেশি-বিদেশি দোসররা জড়িত থাকতে পারে। তবে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের পথকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয় তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের সমাবেশের মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হবে—কোনো ষড়যন্ত্র আর দানা বাঁধতে পারবে না।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ গতকাল কালবেলাকে বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির বিপ্লবী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যার মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে ভয় দেখানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশি-বিদেশি একাধিক চক্র দীর্ঘদিন ধরে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, যেন তারেক রহমান দেশে ফিরতে না পারেন। তবে কোনো ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না। তারেক রহমান আজ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আশার আলো। আগামীদিনে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তার মতো দেশপ্রেমিক ও সাহসী নেতৃত্ব অপরিহার্য। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবাইকে সতর্ক, ঐক্যবদ্ধ ও শান্ত থাকার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন আবু নাসের রহমাতুল্লাহ।