মিলনায়তনে চলছে কর্মিসভা। বক্তৃতা শেষের দিকে। বাতাসে স্লোগানের রেশ। ঠিক সেই সময় সামনে এলো ছোট ছোট মাটির ব্যাংক।
সভার শেষটা তাই হাততালি বা স্লোগানে নয়, থেমে যায় মাটির ব্যাংকে। নির্বাচন পরিচালনায় তহবিল সংগ্রহের জন্য নেতাকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেই ব্যাংক। ছোট্ট পাত্র, কিন্তু তার ভেতর জমার কথা বড় এক লড়াইয়ের খরচ।
বরিশালে এই দৃশ্য দেখা যায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নগরীর এ কে স্কুল মিলনায়তনে কর্মিসভার আয়োজন করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ। দলের বরিশাল জেলা শাখা আয়োজিত সভা শেষে নির্বাচন পরিচালনার তহবিল সংগ্রহের প্রতীকী উদ্যোগ নেওয়া হয়; নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় মাটির ব্যাংক।
দলের নেতাকর্মীদের ভাষায়, বড় অনুদানের বদলে ছোট ছোট সঞ্চয়ই এই উদ্যোগের মূল কথা। মাটির ব্যাংক শুধু টাকা জমানোর পাত্র নয়, এটি জনগণের অংশগ্রহণে রাজনীতি করার অঙ্গীকার।
সভা শেষে বেরোনোর সময় অনেকের হাতেই দেখা যায় সেই ব্যাংক। ভোটের প্রস্তুতি যে শুধু মিছিলে কিংবা পোস্টারে সীমাবদ্ধ নেই। শহরের ভাড়াবাড়ি কিংবা ঝুপড়ি ঘরের কোণায় রাখা ছোট ব্যাংকেও শুরু হয়ে যায়, বরিশালে শুক্রবার বিকেল যেন সেটাই মনে করিয়ে দিল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের বরিশাল মহানগর শাখার সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন মানেই দীর্ঘদিন ধরে কালো টাকার প্রভাব। তাঁর কথায়, প্রায় তিন দশক ধরে রাজনীতি থেকে জনপ্রতিনিধিত্ব ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে।
ফলে মধ্যবিত্তদের জন্য রাজনীতিতে জায়গা ছিল না। কর্মীদের টাকায় নির্বাচন করার এই উদ্যোগ সেই পুরোনো ধারার বাইরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয় বলেই তিনি মনে করেন।
বাসদের মনোনীত প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, অন্যের টাকায় নির্বাচন করা এ দেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। ব্যবসায়ী বা ঠিকাদারদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তিতে ভোটে দাঁড়িয়ে পরে নির্বাচিত হয়েই সেই ধার জনগণের পকেট কেটে শোধ করার নজির আছে। তাঁর কথায়, তিনি সেই পথে হাঁটতে চান না। কর্মীদের টাকায় নির্বাচন করার অর্থ হলো নির্বাচিত হলে জনগণের কাছে শুধু দায়বদ্ধ থাকা, জনগণের টাকায় ভাগ বসানো নয়।
এর আগে কর্মিসভার শুরুতেই ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে উদীচী, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ছায়ানট ভবনে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান বক্তারা। সাংবাদিক নূরুল কবিরকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাতেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভা থেকে নির্বাচন বানচালের যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয়।
কর্মিসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ। বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক ও বরিশাল-৫ আসনে বাসদ মনোনীত প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে এবং জেলা শাখার সদস্য শহিদুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন জেলা নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।
কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর মানুষ আবার ভোট দেওয়ার প্রস্তুতিতে ছিল। জাতীয় সংসদকে লুটপাটকারীদের ক্লাব থেকে জনগণের অধিকার আদায়ের কেন্দ্রে রূপান্তরের লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই বাসদ বরিশাল-৫ আসনে ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীকে প্রার্থী করেছে। তাঁকে বিজয়ী করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেন নেতাকর্মীরা।
বজলুর রশিদ আরো বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই সুযোগে দেশজুড়ে নৈরাজ্য, হামলা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানো হচ্ছে। এসব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত না হলে দেশ আরো অস্থিতিশীল হবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভেঙে পড়বে এবং নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। তিনি হত্যা, গুম ও মব সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।