Image description

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে নানাবিধ চাপে কোণঠাসা জাতীয় পার্টি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে তকমা অর্জনের পাশাপাশি দল ভেঙে যাওয়ায় এক প্রকার অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে দলটি। এসব সংকটের সঙ্গে যোগ হয়েছে তাদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে কয়েকটি মহলের সম্মিলিত প্রয়াস। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব ও নিরাপত্তার শঙ্কার মধ্যেও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয় পার্টি।

নীতিনির্ধারকরা জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, এখন শুধু চূড়ান্ত ঘোষণার অপেক্ষা। এ লক্ষ্যে আজ (বুধবার) দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা আহ্বান করা হয়েছে। একই দিনে দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঝে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করবে জাতীয় পার্টি। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি এবং নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নিরপেক্ষতার অভাবের প্রশ্ন তুলে দলের একটি অংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী কালবেলাকে বলেন, ‘এখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়নি, তবে বুধবার কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন, দেশের আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি আমাদের শঙ্কিত করছে। নির্বাচন কমিশন যদি সঠিক ভূমিকা রাখতে না পারে এবং পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, তাহলে নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা আমাদের প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের নিরাপত্তাহীন পরিবেশে ফেলতে পারি না।’

দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঝে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে বুধবার। টানা পাঁচ দিন প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা দেওয়া যাবে, যা শেষ হবে রোববার। এরপর সোমবার থেকে শুরু হবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার পর্ব। বিভাগভিত্তিক এই সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর এবং চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২২ ডিসেম্বর রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ ডিসেম্বর খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের এবং ২৪ ডিসেম্বর বুধবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে ২৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে দলটি। মনোনয়ন ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

গত ১১ ডিসেম্বর তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের দিন নির্ধারণ করেছে কমিশন। এ লক্ষ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শেষ দিন ১১ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে প্রতীক বরাদ্দ করবেন ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি এবং শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ কালবেলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের নীরব প্রস্তুতি রয়েছে দলের। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা। এ লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। এরপরই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের কার্যক্রমে প্রবেশ করবে জাতীয় পার্টি।’