দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর নির্বাসন থেকে অবশেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে আবেগ, উচ্ছ্বাসে ভাসছেন দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সকল জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসে মানুষ। পাশাপাশি বিএনপির ভবিষ্যৎ কান্ডারিকে বরণ করে নিতে অপেক্ষায় আছে রাজধানী গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি। প্রথমবারের মতো বাড়ির স্বত্বাধিকারী কোনো সদস্য বাড়িটিতে বসবাস করবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসন থেকে আগামী ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গেল ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এই ঘোষণা দেন। মির্জা ফখরুলের ঘোষণার পর থেকে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন উদ্দীপনা। দলের ভবিষ্যৎ নেতার দেশে ফেরা উপলক্ষে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়ি এবং গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয় গেল কয়েকদিন আগে থেকে সংস্কার ও নতুন করে সাজানো শুরু হয়। সেই কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।
সূত্র মতে, লন্ডন সময় ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশ সময় ২৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর নির্বাসিত থাকা বিএনপির এই শীর্ষ নেতা জন্মভূমির মাটিতে পা রাখতে পারেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তারেক রহমান দেশে ফিরে যে বাড়িতে উঠবেন (গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়ি), সেটি ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বাড়ির চারপাশে দেয়ালের শুভ্র সাদা রং, কাঁটাতারের বেড়া এবং নিরাপত্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজও শেষ পর্যায়ে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি পুলিশ বক্স বসানোও প্রায় শেষ। ছোট গেট বদলে লাগানো হয়েছে বড় গেট। ভেতরে চলছে শেষ সংস্কারের কাজ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও তারেক রহমানের হাতে গড়া অরাজনৈতিক সেবামূলক সংগঠন ‘আমরা বিএনপি পরিবারে’র সদস্য সচিব আতিকুর রহমান রুমন জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বরণ করতে গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িটির সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। ইতোমধ্যেই সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে আনা হয়েছে।
রুমন বলেন, গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়ির পাশাপাশি খুব কাছেই তার মা ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ভাড়া বাসা ফিরোজাতেও তিনি (তারেক রহমান) ও তার পরিবার উঠবেন।
এদিকে, তারেক রহমান দেশে ফিরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে নিয়মিত দাপ্তরিক কাজ করবেন। ইতোমধ্যেই গুলশান-২’এর ৮৬ নম্বর রোডের এই কার্যালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানোসহ সংস্কার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
আতিকুর রহমান রুমন আরও জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছেন। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের ফেরা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাতে কোটি মানুষের উপস্থিতির সম্ভাবনার কথা বলেন রুমন।
এদিকে, ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চেলছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে নিরাপত্তা ইস্যুটি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও তার নিরাপত্তা বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যাতে নিরাপদে থাকে, সে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য সরকার প্রতি ইতোমধ্যেই আহ্বান জানিয়েছি আমরা। আমরা দলীয়ভাবেও চেষ্টা করবো, সরকারকেও আহ্বান জানাবো যাতে উনার (তারেক রহমান) নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
সালাহউদ্দিন বলেন, কোনো আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে, সরকারের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব আছে। জনগণের সচেতনতা জরুরি। ইনশাআল্লাহ, এই ধরনের ঘটনা আমরা বন্ধ করতে পারব।
বহুল আলোচিত ২০০৭ সালের ১/১১’র সেনা সমর্থিত সরকারের ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের বিশেষ সরকারের ৭ মার্চ ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন সেই সময়ের তরুণ তারেক রহমান। গ্রেফতারের পর তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ বিএনপির। ওই সরকারের সময় দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, চাঁদাদাবিসহ বিভিন্ন অভিযোগ মোট ১৩ টি মামলা দায়ের হয় তারেক রহমানের নামে। এরপর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালত তাকে জামিন দেন। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। সেই থেকে তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি। বিগত হাসিনা সরকার তারেক রহমানের অবর্তমানে তার নামে মোট ৮৪টি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলাতেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। হাসিনার শাসনামলে দেশের গণমাধ্যমে তারেক রহমানের কোনো ধরনের বক্তব্যও প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়।
অবশেষে ছাত্র-জনতার রক্ষক্ষয়ী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বিগত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ও তার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ সুগম হয়। আদালতে প্রতিটি মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। এরপর তার দেশে ফেরার সকল বাধা উঠে যায়।