Image description

বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি সহ আগামী নির্বাচিত সরকারের সামনে ১২টি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্বাচিত সরকারকে প্রথম বছরই গ্রহণযোগ্য শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া, তাৎক্ষণিক সংকট নিরসনই ওই সরকারের মূল এজেন্ডা হওয়া উচিত।

গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিডের আয়োজনে পরবর্তী সরকারের জন্য সামাজিক অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের’ (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক। সেমিনারে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর যদি তারা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয়ার কথা চিন্তা করে, তবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য খুব বেশি সময় তাদের হাতে থাকবে না। মূল প্রবন্ধে আগামী সরকারের সামনে প্রধান ১২টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- এলডিসি উত্তরণের জন্য সময় বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। এ ছাড়া আছে- বিনিময় হার ধরে রাখতে রিজার্ভ বাড়ানো, রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো। অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে- ঋণের চাপ সামাল দেয়া, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো। এ ছাড়া, তথ্য-উপাত্তের স্বচ্ছতা আনা ও রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ- ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে উঠতে পারে। 

সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, উন্নত দেশগুলো জিডিপির পাঁচ শতাংশের সমান স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে পারে। কারণ, সেসব দেশ তাদের জিডিপির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের সমান রাজস্ব আয় করে। কিন্তু আমাদের জিডিপির তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ রাজস্ব আয় দিয়ে কীভাবে স্বাস্থ্যে ৫ শতাংশ ব্যয় করবো? আর আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হলে ঋণের বোঝা বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, দেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত কম থাকায় রাজস্ব আয় বাড়ানো না গেলে প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা সম্ভব হবে না। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা না গেলে দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে বর্তমানে আর্থিক খাতের দুরবস্থার মধ্যেও রাজস্ব আদায়ের গতি তুলনামূলকভাবে ভালো রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে আমদানি করের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমিয়ে ভ্যাট ও আয়কর আদায়ের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে মোবাইল ফোন আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। শুল্ক কমানো হলে দেশের বাজারে মোবাইল ফোনের দাম কমবে এবং সাধারণ ক্রেতারা কম দামে স্মার্টফোন কেনার সুযোগ পাবেন।

সেমিনারে র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হবে। তিনি জানান, গত তিন বছরে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ বেড়েছে। এ ছাড়া, গত এক বছরে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে নারীদের অংশগ্রহণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। 

র‌্যাপিড জানায়, বর্তমানে রাজস্ব আদায়ের যে গতি রয়েছে তা বাড়ানো না গেলে নতুন সরকার এসে চলতি অর্থবছরে নতুন কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম সহজে বাস্তবায়ন করতে পারবে না। রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়ানো না গেলে বহু উন্নয়ন প্রকল্প পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়াটি কিছুটা বিলম্বিত করার জন্য জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে র‌্যাপিড।

আবদুর রাজ্জাক সতর্ক করে বলেন, যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া এলডিসি থেকে বের হয়ে এলে বাংলাদেশকে বহুমুখী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে এই সময়সীমা কিছুটা পিছিয়ে দেয়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত জরুরি।