সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আগামী ১৭ ও ১৮ই ডিসেম্বরের মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। সমমনাদের এমন বার্তাই দেয়া হয়েছে। এই দু’দিন শরিক দল ও জোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে আসন নিয়ে সৃষ্ট কোন্দল নিষ্পত্তি করা। সমমনাদের বেশ কিছু আসন ছাড় দেবে দলটি। যদিও কতো আসন শরিকদের ছাড় দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনার মধ্যদিয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। ওদিকে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে যুগপৎ আন্দোলনের সহযোগীদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বলে এমন বার্তাও সমমনাদের দেয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ২৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি’র আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী এবং সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বিবেচনায় নিয়ে শরিকদের মধ্যে বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীদের আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসন ছাড়লেই হবে না তাদের জিতিয়েও আনতে হবে। এক্ষেত্রে জোটের বড় বা সিনিয়র নেতা, কিন্তু ভোটের মাঠে যাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম- সরকার গঠন করলে তাদের সংসদের উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যথাযথভাবে জায়গা করে দেয়া হবে।
সমমনাদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ১৭ থেকে ১৮ই ডিসেম্বর শরিকদের আসন চূড়ান্ত, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতা গেলে জাতীয় সরকার গঠনসহ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করা হয়। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে আসন ছাড়ের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বিএনপি। তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলেও সমমনাদের জানিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা দল ও জোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠকের মধ্যে আসন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, সেই ঐক্য অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর আসন সমঝোতা নিয়ে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এনিয়ে আগামী ১৭ ও ১৮ই ডিসেম্বরের মধ্যে একটা মীমাংসা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা মানবজমিনকে বলেন, আগামী ১৭ ও ১৮ই ডিসেম্বর আসন নিয়ে আলোচনা হবে। এদিন দু’দিন যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্যদিয়ে আসন নিয়ে সৃষ্ট কোন্দল সমাধান করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, দুই দফা দলীয় প্রার্থী ঘোষণার সময় সমমনাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করায় বিএনপি’র সমালোচনা করেন যুগপৎ আন্দোলনের নেতারা। তাদের অবমূল্যায়ন ও অবজ্ঞা করা হয়েছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। তাদের যথাযথ মর্যাদা ও মূল্যায়ন করার জন্য বিএনপি’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মানবজমিনকে বলেন, আগামী ১৭ ও ১৮ই ডিসেম্বর বিএনপি’র সঙ্গে শরিকদের পৃথক বৈঠকে আসন চূড়ান্ত হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গণঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মানবজমিনকে বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আসন নিয়ে সমমনাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়। আর আসন ছাড়ের বিষয়ে ইতিবাচক বিএনপি। এক্ষেত্রে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলেও জানিয়েছে।