ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের এমপি প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীকে শনাক্ত করার দাবি করলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশ ইতিমধ্যে একজনের ছবি ও নাম প্রকাশ করে তার বিষয়ে তথ্য চেয়েছে। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। ছবি প্রকাশের পরপরই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শুরু হয় নানা আলোচনা। অনেকেই শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি আদাবর ছাত্রলীগ নেতা বলে দাবি করছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হলেও তার নাম পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলাকারীকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি তিনি প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন। হাদির হত্যাচেষ্টাকারীরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এজন্য দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
কে এই ফয়সাল: ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ই মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হিসেবে ছিলেন। পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামের প্রোফাইলে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন। ২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন। ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা-৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা- ১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮শে অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বৃটিশ কলম্বিয়া স্কুলের চতুর্থতলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদাবর থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম। ৭ই নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। তখন তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, তিনটি মুঠোফোন ও পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই মামলায় গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ই আগস্ট আবারো আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তার এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তার বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এলো। এরকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি এত অল্প সময়ের (৩ মাস ৮ দিন) মধ্যে কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। এ নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় তার সঙ্গে ফয়সাল করিমের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ছবি রয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে গুলি করা ব্যক্তির চেহারার সাদৃশ্য থাকায় গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ফয়সাল করিমের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় বলে জানা গেছে। পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, ফয়সাল করিম মাসুদের স্থায়ী ঠিকানা বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে, কেশবপুর কলেজ সংলগ্ন এলাকায়। তার বাবার নাম হুমায়ুন কবির। তিনি ঢাকার আদাবর থানাধীন পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বসবাস করতেন। আদাবর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে বলেও পিসিআর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তার পরিবারের কেউ বর্তমানে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন না। তারা অনেক আগেই তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে এলাকা ত্যাগ করেছেন।
মামলা হয়নি এখনো: হাদি হত্যার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান বলেন, ঘটনার পর থেকেই সন্ত্রাসীদের আটক করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। ইতিমধ্যে মূল আসামিকে শনাক্তও করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি। আমরা হাদির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।
শিগগির আইনের আওতায় আনা সম্ভব: শনিবার রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়োমে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ শেষে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। আমরা খুঁজতেছি, প্রাইম সাসপেক্টকে খুঁজতেছি। এখনো ২৪ ঘণ্টা পার হয়নি। হোপফুলি আমরা হিট করতে পারবো। আমরা জনগণের সহযোগিতা চাইছি।
৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: গতকাল আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি, জুলাইযোদ্ধা ওসমান হাদিসহ জুলাইয়ের সম্মুখ-সারির যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লুট হওয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী হাদিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এই বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অনতিবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এতদিন শুধু সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হতো। এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে যারা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চাইবেন, তাদেরও লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। আগামী ২৫শে ডিসেম্বর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার নিরাপত্তার ব্যাপারে যত ধরনের প্রস্তুতি আছে, আমরা নেবো এবং তার নিরাপত্তা দেবো।
ডিএমপি’র বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হলো: আসামি শনাক্তের বিষয়ে ডিএমপি’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। এই ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত ডিসি ও ওসি মতিঝিলের মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।
সীমান্তে সতর্কতা: অন্যদিকে হাদির হত্যাচেষ্টাকারী যাতে দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। যশোরের বেনাপোল সীমান্তে নজরদারি ও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। সীমান্তের মেইন পিলার ১৮/১ এস থেকে ৪৭/৩ এস পর্যন্ত প্রায় ৭০.২৭৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কড়া তল্লাশি চলমান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তের যে স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই, সে স্থান সিলগালা করা হয়েছে। যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, হাদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত আসামিরা যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালাতে না পারে, সেজন্য বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বেনাপোল আইসিপি, আমড়াখালি, সাদীপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা, শিকারপুর, শালকোনা, কাশিপুর, মাসিলা, আন্দুলিয়া এবং পাঁচপিসতলা এলাকাসহ সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে বিজিবি’র নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
যা বলছেন হাদির ঘনিষ্ঠজনরা: গত কযেকদিন ধরে এক ব্যক্তি হাদির সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি কয়েকবার তার সঙ্গে দেখাও করেন। অল্প দিনেই গড়ে তুলেন সখ্যতা। এমনকি বাংলামোটরে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আলোচনায় অংশ নেন ওই ব্যক্তি। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদিকে নির্বাচনী নানা বিষয়ে সহযোগিতা করার কথাও জানান। সন্দেহভাজন এই ব্যক্তি একা নয় তার সঙ্গে আরও দু’একজন এসেছিলেন। শনাক্ত এই ব্যক্তি অধিকাংশ সময় মুখে মাস্ক পরে থাকতেন। তাকে মাস্ক খুলতে বললেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন।
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ইসরাফিল ফরায়েজী মানবজমিনকে বলেন, প্রায় সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি ঘোরাফেরা করে এবং হাদির ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। ৭ই ডিসেম্বর তিনি ইনকিলাব সেন্টারে আসেন। এর আগে আরও একবার এসেছিলেন, সেদিন শুধুমাত্র দেখা-সাক্ষাৎ করে চলে গেছেন। যখন তিনি হাদির সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন- ‘তার অনেক লোকজন আছে তিনি হাদি ভাইকে সাপোর্ট দিবেন। যেকোনো ইভেন্টে তিনি থাকবেন এবং দুইশ’ বাংলাদেশের পতাকা বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আরও অনেকগুলো কথা উপস্থাপন করেছিল। এ ছাড়া মিছিলের সময় লোক দিবে, তার কোনো সমস্যা নেই এ রকম নানান কথা বলেছে। প্রায়ই এ ধরনের ইস্যুগুলো হাদি ভাইয়ের সঙ্গে নানা সময়ে বলতো। হাদি ভাইয়ের সঙ্গে যখন পরিচয় হয় তখন সে নিজ থেকে তার নম্বর দেয়। যত রকমভাবে পেরেছে সে হাদি ভাইয়ের কার্যক্রমের ভেতরে ঢুকে যেতে চেয়েছে। ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছে। ইনকিলাব সেন্টারে প্রায়ই বিকালে মিটিং হতো। ৯ই ডিসেম্বর বিকালে সে আসে ইনকিলাব সেন্টারে। সেখানে হাদি ভাইসহ অনেকে মিটিং করছিল। মিটিংয়ে নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিল, কোথায় কোথায় তারা মুভ করবে, কোথায় যাবে এই সময়টাতেই ওই ব্যক্তিও সেখানে ছিল। সন্দেহভাজন ব্যক্তির পাশে আরেকজন ব্যক্তি এসেছিল সেও তার পাশে বসে ছিল কিন্তু তার বিষয়ে এখনো আইডেন্টিটি করতে পারিনি, তবে যেহেতু তারা একসঙ্গে এসেছে পাশাপাশি বসেছে, একই লোক হতে পারে। তবে গুলির সময় সে ছিল কিনা এখনো কনফার্ম হতে পারছি না। কিন্তু এতটুকু বুঝতে পেরেছি তারা এক সঙ্গেরই লোক। ভিডিও ফুটেজে অন্য যাদের দেখা যাচ্ছে তারা হাদি ভাইয়ের লোক, সবসময়ই হাদি ভাইয়ের পাশে থাকে।
‘মঞ্চ ২৪’-এর আহ্বায়ক ফাহিম ফারুকী বলেন, তারা দুই সপ্তাহ ধরে প্রচারণা টিমের সঙ্গে জড়িত। বাংলামোটরে অবস্থিত ইনকিলাব সেন্টারে আসে। ইনকিলাব সেন্টারে সবার জন্য বসার সুযোগ আছে। তারা সেখানে আসে এবং তাদের যখন মাস্ক খুলতে বলা হয় তখন সে বলে তার সমস্যা আছে। এবং শরীফ ওসমান হাদি ভাই খুবই উদার মনের সেজন্য তিনি তাদের সন্দেহ না করে নির্বাচনী প্রচারণার যে টিম সেটাতে নিয়েছিল এবং ঘটনার দিন জুমার নামাজের পূর্বেও তারা হাদির সঙ্গে ছিল। হাদি যখন জুমার নামাজে প্রবেশ করে সেই দু’জন ব্যক্তি অর্থাৎ যিনি কিলিং করেছেন এবং যিনি বাইক চালিয়েছেন তারা বাইরে অপেক্ষা করে হাদির গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য। এবং হাদি যখন নামাজ থেকে বের হয় তার পরবর্তীতে তারা তার পিছু নেয়।
৪ঠা ডিসেম্বরের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সন্দেভাজন এই ব্যক্তি ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। সেখানে হাদির সঙ্গে বসে কথা বলছিলেন। ৯ই ডিসেম্বর বিকালে বাংলামোটর ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সন্দেহভাজন শনাক্তকারী ব্যক্তি ইনকিলাব মঞ্চের একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে ওসমান হাদির ডান পাশে মেঝেতে বসে ছিলেন। এ ছাড়া তাকে এ রকম বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় মাস্ক পরিহিত অবস্থায়।
এই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের নির্বাচনী ক্যাম্পের সদস্য রাকিব আহমেদ রাফি। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ওইদিনের আলোচনাটা ছিল আমাদের বিজয় দিবসের প্রোগ্রাম নিয়ে। সেখানে আমরা যারা ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করি তারা ছিলাম। অপরিচিত এই দু’জন ব্যক্তি মিটিংয়ের মাঝামাঝি সময়ে আসে। তারা এসে হাদি ভাইয়ের পাশে বসে। সেদিনই প্রথম আমি তাদের দেখেছি। ওই লোকটি আমাদের র্যালির জন্য লোকও দেয়ার কথা বলে। এবং টি-শার্ট, পতাকা এসব নিয়ে আলোচনা চলছিল- এগুলো সে দিতেও চেয়েছিল।