বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘গণতন্ত্রের টর্চ বেয়ারার’ অভিহিতি করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যার অপেক্ষায় বাংলাদেশ চেয়ে আছে, তিনি দেশে ফিরে আসছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “গণতন্ত্রের টর্চ বেয়ারার জনাব তারেক রহমান ২৫ তারিখে বাংলাদেশে ইনশাল্লাহ ফিরে আসবেন... এটা আমাদের আনন্দের সংবাদ।”
শনিবার সকালে ফার্ম গেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন আমীর খসরু।
আমীর খসরু বলেন, ‘‘বিএনপির দেশ গড়ার, আগামীর দেশ গড়ার যে প্রত্যায়, যে রূপরেখা, যে স্বপ্ন আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব নিয়েছেন সেটার অংশ হিসেবে আজকের এই দেশ গড়ার কর্মসূচি। আমরা সবাই বেশি আনন্দিত যে, আগামী ২৫ তারিখে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা যার অপেক্ষায় বাংলাদেশ, যার আগমনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগামী দিনে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আনার যে সংগ্রাম বিগত বছরগুলোতে আমরা করেছি।
“যার নেতৃত্বে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছি সেই আন্দোলনের নায়ক, গণতন্ত্রের টর্চ বেয়ারার জনাব তারিখ বাংলাদেশে ইনশাল্লাহ ফিরে আসবেন।”
গেল ১৭ বছর ধরে লন্ডনে পরিবার নিয়ে বসবাস করা তারেকের দেশে ফেরার খবর আসে শুক্রবার রাতে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে আসবেন।
২০০৭-০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার মত তার বড় ছেলে তারেক রহমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি পরিবার নিয়ে লন্ডনে চলে যান, দেশে আর ফেরেননি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে যেদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হল, সেদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেককে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর গত সাত বছর ধরে লন্ডন থেকে ভিডিও কলেই তিনি দল চালাচ্ছেন।
‘এই সময়ে স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করার ঘটনা নিয়ে আমীর খসরু বলেন, “খুবেই দূঃখজনক। চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতির ওপর আক্রমণ হয়েছে। গতকাল আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। এই সময়টাতে যখন স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“যখন বিএনপি বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন স্বপ্ন দেখছে, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৭ বছর নিপীড়ণ-নির্যাতন ভোগ করেছে… ৫ অগাস্টের পরে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন আসছে সেই পরিবর্তনকে মাথায় রেখে বিএনপি একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়ার জন্যে, একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার জন্যে যে রাজনীতি তারেক রহমান ধারণ করেছেন।
“আমরা দেখতে পারছি তার বিপরীতে একটি রাজনীতি। সেটা হচ্ছে মবক্রেসির রাজনীতি, গায়ের জোরের রাজনীতি, অপরের প্রতি অসম্মান রেখে কথা বলার রাজনীতি, অন্যকে ছোট করার রাজনীতি। যে কোনো অজুহাতে অস্থিতিশীলতার রাজনীতি যেটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য কাম্য হতে পারে না।”
এ ব্যাপারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ‘চোখ-কান খোলা রাখার’ আহ্বান জানিয়েছেন আমীর খসরু।
তিনি বলেন, “আমাদের নেতা ২৫ তারিখ আসছেন। সেই দিন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক অঙ্গনে এক নতুন জোয়ার সৃষ্টি হবে ইনশাআল্লাহ। আপনাদের সবাইকে সেই দিনের জন্য, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
আমীর খসরু বলেন, আসন্ন নির্বাচন কেবল বিএনপির জয় নয়, এটি হবে ‘গণতন্ত্রের জয়’।
“বিএনপি গণতন্ত্রের টর্চবাহক—এই দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে দেশ পরিচালনার ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের সুফল ও অর্থনৈতিক সুফল দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। শুধু রাজনৈতিক গণতন্ত্র নয়, অর্থনীতিতেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই আমাদের কাজ শুরু হবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বলেন, উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প নয়, বরং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগই হবে বিএনপির অগ্রাধিকার। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের থেকে বিএনপির নেতারা এই কর্মশালায় অংশ নেন।