রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বিজ্ঞান জাদুঘরের উল্টোদিকে ‘ভূইয়া বাড়ি, ৬০ পশ্চিম আগারগাঁও’ নাম ফলকযুক্ত পাঁচতলা বাড়িটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের। ক্ষমতা খাটিয়ে তার এই বাড়ির সামনেই পার্ক, লাইব্রেরি ও সরাসরি সংযোগ সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। অথচ, রাজধানীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পার্ক, মাঠ, সড়ক বেহাল ও বেদখল হয়ে আছে।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, অন্যসব পার্ক-মাঠ বেহাল বেদখল রেখে প্রশাসকের বাসার সামনে বেদখল স্কুল উচ্ছেদ করে সে জায়গায় নতুন পার্ক, লাইব্রেরি এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা ক্ষমতার সরাসরি অপচর্চা।
জানা গেছে, প্রশাসক এজাজ আগে বাড়িতে গাড়ি নিয়ে বা পায়ে হেঁটে ঢুকতে হলে তাকে আগারগাঁও কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে তারপর কয়েকটি বাড়ি পার হয়ে ঢুকতে হতো। এখন মূল সড়ক থেকে তার বাড়িতে ঢোকার জন্য প্রায় ৩০ ফুট চওড়া একটি সংযোগ সড়কের নির্মাণ হচ্ছে।
প্রশাসক এজাজের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসক হওয়ার পর ক্ষমতা খাটিয়ে বাড়ির কাছের একটি স্কুল উচ্ছেদের উদ্যোগ নেন এজাজ। পরবর্তীতে স্কুলটিকে বিকল্প জায়গা দেওয়ার কথা বলে উচ্ছেদ করা হয়। পরে ওই জায়গাটিতে পার্ক ও পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, পার্কের জায়গাটি মূলত গণপূর্তের। সেখানে বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ ও সড়ক হলেও কেউ স্কুল উচ্ছেদ করেনি। কিন্তু বর্তমান প্রশাসক প্রথম সুযোগেই স্কুল উচ্ছেদ করেন। তারপর তিনি ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গণপূর্ত থেকে জায়গাটি সিটি করপোরেশনের পার্কের জন্য লিখিয়ে নেন। প্রশাসকের বাসার সামনে সেই জায়গায় এখন নতুন রাস্তা ও পার্ক হচ্ছে।
মোহাম্মদ এজাজের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, মিরপুর কালশি মাঠ ও মোহাম্মদপুর টাউন হল সংলগ্ন পার্কটি জাতীয় গৃহায়নকে ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তে প্রশাসকের বাড়ির সামনের জায়গাটি গণপূর্ত পার্ক হিসেবে দিতে রাজি হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, শুধু আগারগাঁও এলাকায় প্রশাসকের বাসা হওয়ার কারণে সেখানে দ্রুতগতিতে পার্ক, রাস্তা হবে; আর মোহাম্মদপুর, উত্তরায় বা অন্যান্য এলাকায় গণপরিসর বেহাল পড়ে থাকবে—এটা সুস্পষ্টভাবে ক্ষমতার সুবিধাগ্রহণ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ডিএনসিসি এলাকার অন্য সব পার্ক-মাঠের উন্নয়ন বাদ রেখে নিজের বাড়ির সামনে পার্ক ও রাস্তা করার বিষয়টি অবশ্যই দৃষ্টিকটু। তিনি প্রশাসক বলে তার বাড়ির সামনে পার্ক হয়ে যাচ্ছে, আর অন্যান্য এলাকার নাগরিকরা পচা-দুর্গন্ধে থাকবে- এটা নগরবাসীর সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যে জায়গাটি অবৈধ দখলে ছিল সেটি রাস্তার জায়গা না, এটা দুই রাস্তার মাঝখানের সেটব্যাক (ফাঁকা জায়গা)। সেখানে আমরা পার্কও করছি, লাইব্রেরিও করছি। পার্ক ডেভেলপমেন্টের তো আর কোনো প্রজেক্ট নেই আমাদের। যেগুলো উদ্ধার করছি, সেগুলো আমরা আরো সুন্দর করছি।
শীর্ষনিউজ