Image description
তৎপরতা অন্য দলেরও নেতা-কর্মীরা দ্বারে দ্বারে, ভোটার আকৃষ্ট করার চেষ্টা

মানিকগঞ্জে তিনটি সংসদীয় আসনের সবকটিই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এই বাস্তবতায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুর্গ দখলে ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলের নেতা-কর্মীরা দ্বারে দ্বারে কড়া নাড়ছেন এবং ভোটারদের পরিবর্তনের চিন্তায় আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।

মানিকগঞ্জে এক সময় চারটি সংসদীয় আসন ছিল। যার সবটিই ছিল বিএনপির দখলে। সে সময় অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সামসুল ইসলাম খান, হারুনার রশীদ খান মুন্নু, নিজাম উদ্দিন খান ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তাদের অবর্তমানে দলের হাল ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আফরোজা খানম রিতা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ফ্যাসিস্ট সরকারের দীর্ঘ দুঃশাসনের সময় মামলা হামলা করেও চির ধরাতে পারেনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে। বর্তমানে সাতটি উপজেলা নিয়ে মানিকগঞ্জে তিনটি সংসদীয় আসন। এগুলো হলো মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা), মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলা), মানিকগঞ্জ-৩ (সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা)।

মানিকগঞ্জ-১ আসন : এই আসনে বিএনপির প্রার্থী, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর। তারপক্ষে প্রতিদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোকজন মিছিল, সভা করছেন এবং প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ ভোটাররা পর্যন্ত তার জন্য মাঠে নেমে ভোটের মাঠকে জমজমাট করে তুলেছেন।

জনমত থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, এমনিতেই এখানে তার অবস্থান বা জনসমর্থন ব্যাপক। এ ছাড়া আসনটি বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের আসন বলে বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর ব্যক্তিগত প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দলীয়ভাবে বিএনপির প্রভাব। সবমিলে ভোটের মাঠে বিএনপি প্রার্থী এস এ জিন্নাহ কবীরের অবস্থান দারুণভাবে উজ্জ্বল। ভোটারদের ভাষ্য অনুযায়ী, এবারও বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যাবধানে বিজয়ী হবেন। প্রার্থী এস এ জিন্নাহ কবীর নিজেও দিনরাত ভোটারদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন। তিনি তাদের সুবিধা-অসুবিধা ও প্রত্যাশার কথা জানছেন এবং নির্বাচিত হলে এসব ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেবেন- তা নিশ্চিত করছেন। এতে করে ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ফলশ্রুতি হিসেবে তাদের অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির প্রচার তৎপরতায় সামীল হয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

অন্যদিকে বিএনপির বিপরীতে মাঠে নেমেছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. আবু বকর সিদ্দিক। তিনি এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা ভোটরদের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের ধারণাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

এ আসন থেকে আরও যারা প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে নেমেছেন তারা হলেন খেলাফত মজলিশের মুফতি আশরাফুল আলম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মো. খোরশেদ আলম।

মানিকগঞ্জ-২ আসন : এ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী সামসুল ইসলাম খানের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্ত। ভোটের মাঠের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন জামায়াত প্রার্থী, কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান। এ ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন খেলাফত মজলিশের মুহাদ্দিস শেখ মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মোহাম্মদ আলী।

মানিকগঞ্জ-৩ আসন : এ আসনটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে রয়েছে মানিকগঞ্জ পৌরসভা। আসনটি শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় এখান থেকেই জেলা নিয়ন্ত্রিত হয়। এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী হারুনার রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে, বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আফরোজা খানম রিতা। ভোটারদের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন জামায়াতের টিম সদস্য (ঢাকা উত্তর অঞ্চল) মাওলানা দেলোয়ার হোসেন। সূত্র মতে, দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির দায়িত্ব পালন করায় এ আসনে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে সব শ্রেণির মানুষের রয়েছে সুসম্পর্ক। দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকায় নির্বাচনে তিনি খুব সহজেই জয় পাবেন।

এ আসন থেকে আরও যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মাওলানা সামসুদ্দিন আহমেদ এবং খেলাফত মজলিশের অ্যাডভোকেট তাওহীদুল ইসলাম তুহিন।