আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনেই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় ভোটের মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে হ্যাভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে (ঠাকুরগাঁও-১ আসনে) লড়ছেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাকি আসনগুলোতেও বিএনপির বাঘা বাঘা নেতা রয়েছেন।
মাঠের তথ্য অনুযায়ী, ভোট যুদ্ধে আওয়ামী লীগ না থাকায় মূলত লড়াই হবে বিএনপি বনাম জামায়াতের। তবে তিন আসনেই বিএনপির ইতিবাচক অবস্থান থাকায় সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। তারা সর্বাত্মক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০টি সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগ সাতবার, বিএনপি দুবার ও জাতীয় পার্টি একবার জয়ী হয়েছে। আসনটিতে এবারও বিএনপির প্রার্থী দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার বিপরীতে লড়ছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগরীর সহসেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন।
এ আসনের হ্যাবিওয়েট প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটাই আমার শেষ ভোট। ঠাকুরগাঁও এখনো অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া জেলা। আমাদের এ জেলাকে এগিয়ে নিতে হবে।’ তার বিপরীতে এলাকার নানা সামাজিক ও ধর্মীয় আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। বাজার ঘাট থেকে শুরু করে চায়ের দোকান পর্যন্ত যাচ্ছেন তিনি। দিয়ে যাচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, ‘বহুদিন বহু নেতা দেখেছি কিন্তু এই ঠাকুরগাঁও জেলাকে নিয়ে কাজ করেছেন, উন্নয়ন করেছেন- এমন নেতা দেখি নাই। বিগত দিনের নেতারা শুধু নিজেদের পকেট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাই এ অবস্থার অবসান চাই। আর এরজন্য আমি মনে করি ভোটাররা আমাকেই বেছে নেবেন।’
উল্লেখ্য, এ আসনে আরও কয়েকটি দলের প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা মো. হাফিজ উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের আলহাজ হাফেজ মাওলানা সাঈদ আহমদ সাইফি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মো. ফয়জুল হক প্রধান।
ঠাকুরগাঁও-২ আসন : হরিপর ছয়টি, রানীশংকৈল উপজেলার দুটি এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন গঠিত। এবার এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ডাক্তার আবদুস সালাম। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হয়েছেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আবদুল হাকিম। এ ছাড়াও ভোটের মাঠে রয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী ফারুক হাসান।
মাঠের খবর অনুযায়ী, এ আসনে বিএনপি এবং জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পাড় করছে। প্রার্থীদের পক্ষে চলছে জনসংযোগের পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। উভয়পক্ষই বার্তা দিচ্ছে ঐক্য আর শান্তির। দেওয়া হচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতিও।
ঠাকুরগাঁও ৩ আসন : পীরগঞ্জ উপজেলা পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং রানীশংকৈল উপজেলা পৌরসভা এবং ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে বেশির ভাগ সময় ধরে আসনটি আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের দখলে ছিল। এ আসনে দুবার জয়লাভ করে বিএনপি। এবারও নির্বাচনকে ঘিড়ে বেশ সরগম আসনটি। অন্যান্য দলের প্রার্থীর সঙ্গে এবার নতুন করে যোগ হয়েছেন এনসিপি এবং গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থীরা। সব দলের প্রার্থীরাই এখন মাঠে সরব। মাঠের তথ্যানুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মূল লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে।
এ আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামীর নির্বাচন বাংলাদেশকে সাজানোর চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। ভোট দিতে জনগণ মুখিয়ে আছে। আমাদের বিজয় নিশ্চিত।’ আসনের জামায়াত প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ১৭ বছর সাধারণ মানুষ জামায়াতকে ভোট দিতে পারেনি। এবার আশা করছি সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ভোট হবে এবং তাতে জামায়াতের জয় অনিবার্য বলে মনে করছি।’
এনসিপির প্রার্থী গোলাম মুর্তজা সেলিম বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ-তরুণনির্ভর বাংলাদেশ। আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব তরুণদের হাতে থাকুক এটা জনগণ চায়। সারা দেশে তারুণ্যের গণজোয়ার উঠেছে।’ গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘মানুষ এবার পরিবর্তন চায়। পুরোনো রাজনীতিকে চায় না।’