Image description

খুলনা জেলার ছয়টি আসনে নির্বাচনি প্রচারণা এখন তুঙ্গে। সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি শুভেচ্ছা জানিয়ে টাঙানো পোস্টার শোভা পাচ্ছে নির্বাচনি এলাকায়। খুলনা-১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ আসনে ভোটের মাঠে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত। তবে খুলনা-৩ আসনে লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে এনসিপি প্রার্থী।

জানা যায়, শহরতলির বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনটি মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটব্যাংক হিসেবে খ্যাত। এ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানের সঙ্গে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় জামায়াত এই আসনে তাদের পূর্বঘোষিত প্রার্থীর পরিবর্তে কৃষ্ণ নন্দীকে মনোনয়ন দিয়েছে। গতকাল তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ এলাকায় জামায়াত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ গণসংযোগ করেছেন। বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের বড় একটা অংশ আমাকে সমর্থন করে। সবাই বিশ্বাস করে এমপি হলে এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করব।’

জামায়াতের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘প্রতিবার ভোট এলে হিন্দুরা নির্যাতিত হয়। তাদের বাড়িঘর লুট করা হয়, ভাঙচুর করা হয়। এবার নিজেদের অধিকার আদায়ের সময় এসেছে।’ নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি।

বন্দরনগরীর সদর থানা ও সোনাডাঙ্গা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত খুলনা-২ আসনটি ‘মর্যাদার আসন’ হিসেবে বিবেচিত হয়। আসনটিতে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালের। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘জনগণের জন্য ৪৭ বছর ধরে কাজ করছি খুলনা শহরে। গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছি। মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেছি।’ জামায়াতের প্রার্থী শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল বলেন, ‘মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটে চলা, সাংগঠনিক কার্যক্রম  মজবুত করা এবং সংগঠনকে গতিশীল করছি।’ জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জাতীয় নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ বড় ফ্যাক্টর হতে পারে খুলনা-৩ আসনে। নির্বাচনে প্রচারণায় নেমেই চমক দেখাচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল। তিনি হতাশায় ডুবে থাকা তরুণ-যুবকদের নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। বকুল বলেন, ‘মৃত শিল্পনগরীকে পুনরুজ্জীবিত করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মাদক নির্মূল ও বন্ধ শিল্পকারখানা চালু করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নেমেছি।’

এ আসনের জামায়াতের প্রার্থী খুলনা মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বন্ধ মিলকারখানা চালুর পাশাপাশি মাদক নির্মূলে সামাজিক সচেতনতা গড়তে চাই।’ অপরদিকে শ্রমিক অধ্যুষিক এই আসনে এনসিপির প্রার্থী এসএম আরিফুর রহমান মিঠু নির্বাচনের মাঠে চমক দেখাতে পারেন।

কৃষিনির্ভর রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে খুলনা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘তৃণমূলে দলকে আরও সুসংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’ জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘দলের দায়িত্বশীল, কর্মী, সমর্থক সবাই ময়দানে আছেন। ভালো সাড়া পাচ্ছি।’ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে বিএনপি-জামায়াতের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী প্রচারণায় থাকায় বাড়তি চমক রয়েছে। বিসিবির সাবেক পরিচালক সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগার লবী বলেন, খুলনা-৫ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। ভোটাররা সংসদ সদস্য নির্বাচিত করলে সুবিধাবঞ্চিত এ অঞ্চলের উন্নয়নে নিজেকে উজাড় করে দেব।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যক্ষ গোলাম পরওয়ার ২০০১ সালে এ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর ধরে মানুষ আমাকে দেখছে। আমি আমার জীবনের একটা বড় অংশই এলাকার মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছি। যদি জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে, হুমকিধমকি না পায়। যদি কালোটাকার লোভে না পড়ে, তাহলে আমরা আদর্শ, নৈতিকতা ও নতুন বাংলাদেশ গড়তে যাচ্ছি, সেখানে আমাদেরই জয় হবে ইনশাআল্লাহ।’

উপকূলীয় দুর্যোগপ্রবণ প্রত্যন্ত কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক জেলা সদস্যসচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তিনি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। বাপ্পী বলেন, ‘তরুণসমাজকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে হবে। খেলাধুলার চর্চাই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের অন্যতম পথ। এতে আমরা শারীরিকভাবে সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে পারব।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থা এখানে খুবই মজবুত। আগে থেকেই জনসম্পৃক্ততা থাকায় প্রচারণায় ভালো সাড়া মিলছে। সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় জামায়াতের প্রার্থীর প্রতি আগ্রহ রয়েছে জনগণের।