আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। বলেন, দলের নাম নিয়ে শতাধিক নামের প্রস্তাবনা এসেছে। ইতিমধ্যে দেশের ২০০টি থানা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানুয়ারির মধ্যে ৪০০টি থানা কমিটি করা হবে। যেটি জনগণের কাছে এবং দলের মোটো ধারণ করতে পারবে- সেই নামটি রাখা হবে।
গতকাল বিকালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ মাঠে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সংবিধান নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের আগে দেশে যেসব নিয়ম-কানুন চলেছে এ দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। আমরা দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। এতে আমরা বুঝেছি ’৭২-এর সংবিধান দিয়ে দেশের মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। এজন্য নতুন সংবিধান প্রয়োজন। যেখানে জনগণ ও রাষ্ট্রের নানা অঙ্গের ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে। তিনি বলেন, নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উদ্যোগে শিগগিরই একটি রাজনৈতিক আবির্ভাব হবে। অন্তর্বর্তী সরকার পতিত, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শিষ্টাচার বজায় রেখেছে। আমাদের ছাত্রদের মধ্য থেকে ৩ জন প্রতিনিধি রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। তারা তাদের মতো কাজ করছে। রাজনৈতিক দল নিয়ে কাজ করছে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আমরা স্বতন্ত্র-স্বনির্ভর থেকে সংগঠনের কলেবর বৃদ্ধি করছি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বলেন, দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরির কারণে জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে নতুন রাজনৈতিক দল করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন সরকারের অনুকূলে কোন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। যদি এমন বক্তব্য হয় তাহলে সেটি সকল দলের জন্য প্রযোজ্য, এককভাবে নাগরিক কমিটির জন্য নয়। তিনি আরও বলেন, দেশের নাগরিকদের অধিকাংশ তরুণ। তরুণরা এই সফলতাকে দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। তারা নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্বে থাকবে এবং দলের প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করবে। এখানে বিভিন্ন বয়সী মানুষের মেলবন্ধন ঘটানো হবে। সিনিয়ররা গাইড করবেন এবং তরুণরা কাজ করবে। তরুণদের চিন্তা ও ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে রাজনীতি হতে পারে না।
সীমান্ত নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, দেশের অনেক জেলায় বর্ডার আছে। কুড়িগ্রাম সীমান্তের কাঁটাতারে ফেলানীকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। আমরা এমন পরিস্থিতি আর দেশে দেখতে চাই না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে দেশের মানুষের ওপর অন্যায়-অত্যাচারে মানুষ কাস্তে হাতে প্রতিহতের জন্য নেমে এসেছে। এই সাহস ও উদ্দীপনার মূলে রয়েছে দেশের পররাষ্ট্রনীতি। দেশের মানুষ কোনোভাবে নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী নয়। সীমান্ত্তে হামলা হচ্ছে, একজন বিজিবি’র আঙ্গুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে এসেছে। দেশের সকল মানুষকে এ জন্য অভিবাদন জানাই। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, সীমান্ত্ত হত্যার ন্যায্যবিচার যেন নিশ্চিত করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবার নিয়ে তিনি বলেন, এখন দেশে অনেক শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়নি। সরকারের এই ব্যর্থতার জায়গা থেকে যেন শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে এবং আহতদের ঘরে ঘরে সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। আর যেন কোনো ভাই চিকিৎসার অভাবে মেডিকেলে শাহাদতবরণ না করে সে ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে। এ নিয়ে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন কাজ করছে। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে বলে জেনেছি। তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, বিগত সময়ে একাধিকবার তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উত্তরের মানুষের জন্য দ্রুত তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের চোখ রাঙ্গানি না দেখে, দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে তিস্তা সমস্যা সমাধান করতে হবে। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির রংপুরের সংগঠক আলমগীর নয়ন, এম আলমগীর কবির, শেখ রেজওয়ান, এম আই সুমন, খন্দকার ময়নুল হক, রিফাত হাসান প্রমুখ।