ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কার করা হয় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৭ কাউন্সিলরকে। ওই কাউন্সিলরদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বিএনপি।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-২ (মহানগর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু সম্প্রতি রাসিকের ১৭ জন সাবেক কাউন্সিলরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য দলের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে সুপারিশ করেন। তাদের মধ্যে প্রয়াত দুই কাউন্সিলর লুকেন ও টিটোর নামও ছিল। বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়ে তারা মৃত্যুবরণ করায় পরিবারগুলোর মধ্যে হতাশা ছিল।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাজশাহী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিনু আরও বলেন, প্রয়াত লুকেন ও টিটো আমার হাতে গড়া কর্মী ছিলেন। তারা দুঃসময়েও দলের হয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। হয়তো এলাকার মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের দাবির মুখে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে ভোট করেছিলেন। তারা বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে গেছেন। এক ধরনের অনুশোচনা ও হতাশা পরিবারগুলোকে বিদ্ধ করত। আমি চেয়েছি বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ এসব নেতাকর্মীর প্রতি মৃত্যুর পরও দলের স্বীকৃতিটা অটুট থাকুক। অন্তত দলীয় স্বীকৃতিটা পেয়ে তাদের পরিবারগুলো সম্মানিত বোধ করবেন। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে দল তাদের স্বীকৃতি দিল। এজন্য আমি দলের প্রতি কৃতজ্ঞ।
অন্যদিকে একই সঙ্গে রাজশাহীর আরও ১৫ জন সাবেক কাউন্সিলরের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়েছে বিএনপি। তাদের মধ্যে অন্যতম ২৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন আজব, ১৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা দল নেত্রী শামসুন্নাহার নাহার, সাবেক কাউন্সিলর বেবি, ১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বেলাল হোসেন, ১৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান লিটন, ২৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফ হোসেন বাচ্চু, ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান বদি, সাবেক নারী কাউন্সিলর শিখা, সাবেক কাউন্সিলর রুহুল আমিন টুনুসহ বহিষ্কৃত কাউন্সিলরদের দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব সাবেক কাউন্সিলর সক্রিয়ভাবে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে ছিলেন। তবে যেসব কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন তাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়নি।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরপরই বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুর বাসভবনে গিয়ে তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, আগামী শুক্রবার বিএনপি প্রার্থী মিনু আনুষ্ঠানিকভাবে নগরীতে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবেন। দলে ফেরা এসব সাবেক কাউন্সিলর ওই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন করে রাজনৈতিক পথচলা শুরু করবেন।
বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু আরও বলেন, ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরেছেন। বিএনপি তাদের আসল ঠিকানা। তাদের ফিরে আসায় নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ২৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর যুবদল নেতা আলিফ আল মাহমুদ লুকেন ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লুকেনের বাড়ি নগরীর তালাইমারী এলাকায়। ২০২৩ সালের ২১ জুন অনুষ্ঠিত রাসিকের নির্বাচনে ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে রাসিক নির্বাচন করায় লুকেনকে অন্যদের সঙ্গে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাসিকের ৩৫ জন কাউন্সিলরকে একযোগে অপসারণ করা হয় সরকারি আদেশে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করলেও লুকেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত যুবদলের রাজনীতি করেছেন। এর আগে লুকেন ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের পদধারী নেতা। মৃত্যুর ১৪ মাস পর তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করল বিএনপি।
রাসিকের ১৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটো গত ১০ এপ্রিল মারা যান। সাবেক কাউন্সিলর টিটো রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে রাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দল তাকেও বহিষ্কার করে। তবে মৃত্যুর ৯ মাস পর বিএনপির প্রয়াত যুবদল নেতা টিটোর বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার করা হলো।
জানা গেছে, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর লুকেন ও টিটোর পরিবার খুশি হয়েছে।