৪৭তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) দিবস উপলক্ষে শহীদ জিয়াউর রহমান হলে আলোকসজ্জা না করায় প্রতিবাদস্বরূপ হলের আনন্দ শোভাযাত্রার ব্যানার কেড়ে নিয়েছেন শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে আনন্দ শোভাযাত্রার প্রাক্কালে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই থেকেই এই দিনটি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি ঘিরে প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট, ভিসি বাংলো থেকে শুরু করে আবাসিক হল ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। কিন্তু এবারে এর ব্যতিক্রম দেখা যায় শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ক্ষেত্রে। জিয়া হলের পার্শ্ববর্তী সাদ্দাম হোসেন হলে আলোকসজ্জা করলেও মেজর জিয়াউর রহমান স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে নামাঙ্কিত হলে আলোকসজ্জা না হওয়ায় রাত থেকেই হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
পরবর্তী সময়ে পরের দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে, কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ। মাঠ থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্তর চত্বরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের কথা ছিলো। সেই মোতাবেক সব বিভাগ, হল ও অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এরইমধ্যে একপর্যায়ে জিয়া হলের র্যালির সামনে যেয়ে আলোকসজ্জা না করার প্রতিবাদে হল প্রশাসনের ব্যানার ছিনিয়ে নেন ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ ও তার অনুসারীরা। পরবর্তী সময়ে হলের প্রভোস্ট ব্যানার ফেরত চাইলেও তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং এমন অবহেলার উপযুক্ত জবাব চান।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘আমি প্রভোস্ট স্যারকে কল দিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান হলে কেন আলোকসজ্জা করা হয়নি তা জিজ্ঞাসা করি। স্যার বলেন যে ভিসি স্যারকে বলো। কেন ভিসি স্যার কে বলতে হবে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সেন্ট্রাল থেকে কোন ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তিনি তার ব্যক্তিগত ব্যর্থতার দায়ভার সব সময় প্রশাসনের উপর চাপানোর চেষ্টা করেন। প্রশাসনের নির্দেশনা না থাকলেও তো তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও আলোকসজ্জা করতে পারতেন।’
ছাত্রদলের এই নেতা আরও বলেন, ‘তিনি শুধু জিয়া হলের প্রভোস্ট ই নন, তিনি একই সঙ্গে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি এবং জিয়া পরিষদের পদধারী নেতা। তিনি আরও নির্দেশনা দেবেন যে অন্যান্য হলেও যেন আলোকসজ্জাকরা হয়। তা না করে তিনি নিজের হল ই সাজাননি। তাই আমি ও আমার অনুসারীরা যেয়ে হলের ব্যানার নিয়ে এসেছি। ভিসি স্যার এব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমি তাকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম যে হল কেন সাজানো হয়নি। ভিসি স্যার সদুত্তর দিতে না পারায় আমি আর ব্যানার ফেরত দেইনি। এমন দুর্বল আদর্শের শিক্ষক নেতাকে জিয়া পরিষদের পদ থেকে অব্যাহতি এবং জিয়া হলের প্রভোস্ট পদ থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গফুর গাজী বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলেই সবার আগে লাইটিং হওয়া উচিত ছিল, এটা আমিও স্বীকার করি। কিন্তু প্রশাসনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেতে একটু বিলম্ব হওয়ায় লাইটিং একটু দেরিতে করা হয়েছে। প্রতিটি জাতীয় দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রেই প্রশাসনের একটা নির্দেশনা থাকে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে হল কর্মকর্তাদের কাছে থেকে ব্যানার কেড়ে নিয়েছে। পরবর্তী আমি তাকে ফেরত দিতে বলেছি, ছাত্রদলের আহবায়ক, সদস্য সচিবও বলেছে কিন্তু সে আর ব্যানার ফেরত দেয়নি।’