Image description

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় এবার বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এবারের নির্বাচনে মনোয়ন পেতে যাচ্ছেন অন্তত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ভিপি এবং জিএসরা। ইতিমধ্যে দলটি সব আসনের জন্য প্রার্থী নির্ধারণ করেছে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি ও মাঠ পর্যায়ের তৎপরতা শুরু করেছে দলটি।

দলটির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এবারের প্রার্থী তালিকার প্রায় ৮০ শতাংশ নতুন মুখ, যারা আগে কখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। নির্বাচনে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৫৯। আগের নির্বাচনগুলোতে প্রবীণ নেতাদের আধিপত্য থাকলেও এবার ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনার চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে দলটি।

জামায়াতের সূত্রে জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেওয়া মহিলা, অমুসলিম, জুলাই যোদ্ধা, ছাত্র প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তকরণের পর বড় ধরনের চমক থাকবে বলেও দলের সূত্র জানা গেছে। এবারের পরিকল্পনায় শরিকদের অংশ নিশ্চিত করতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় অন্তত চারজন সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) জামায়াতের মনোনয়ন পেতে পারেন বলেও জানা গেছে।

প্রাথমিক তালিকার ভিত্তিতে আগামী মাসে আমাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ তালিকায় আমরা চাচ্ছি নানান শ্রেণি পেশার মানুষকে অর্ন্তভুক্ত করতে। তাদের মধ্যে শিক্ষক, তরুণ, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা রয়েছে— অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, প্রধান, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ, জামায়াতে ইসলামী।

এছাড়া সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত তিনজন ভিপি এবং দুইজন জিএসসহ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধিকেও মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য, এরা সবাই জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির নেতা ছিলেন।

ছাত্র প্রতিনিধিদের তালিকায় ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েমের নাম আলোচনায় আছে। এছাড়াও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগাও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে জামায়াতের পরিকল্পনা অনুযায়ী একজন উপদেষ্টা এবং আরও কয়েকজন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতার জন্য প্রয়োজনীয় আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে দলটি। তবে, জোট প্রতিষ্ঠিত না হলে দলের নিজের কয়েকজন প্রার্থীকে এ আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। দলের সূত্র জানাচ্ছে, চূড়ান্ত তালিকায় আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এখনও চলমান।

এ বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রাথমিক তালিকার ভিত্তিতে আগামী মাসে আমাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ তালিকায় আমরা চাচ্ছি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে অর্ন্তভুক্ত করতে।

এর মধ্যে তরুণরা বেশি থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ৮ দলের শরিকরা শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান জামায়াত।

এছাড়াও জামায়াতের ৩০০ আসনে প্রার্থীদের মধ্যে দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমীর  ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরসহ ১৮ জন চিকিৎসক দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করবেন।

জানা গেছে, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে নির্বাচন করবেন। আর ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) বিভিন্ন পর্যায়ের আরও ১৬ জন চিকিৎসককে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত।  

তালিকায় থাকা জামায়াতে অন্য প্রার্থীরা হলেন

ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল (শরীয়তপুর-২); অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান (কিশোরগঞ্জ-৩); অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (রাজশাহী সদর-২); আল মানার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. সুলতান আহমেদ বরগুনা-২; ডা. একেএম ফজলুল হক (চট্টগ্রাম-৯); ডা. আবু বকর সিদ্দিক (মানিকগঞ্জ-১)

ডা. ফরিদুল আলম (চট্টগ্রাম-১২); ডা. শাহাদাৎ হোসেন (চট্টগ্রাম-১৪); যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ (যশোর-২); ডা. মুহাম্মদ আবু নাছের (চট্টগ্রাম-৮); ডা. এ কে এম আবদুল হামিদ (টাঙ্গাইল-৬); ডা. এসএম খালিদুজ্জামান (ঢাকা-১৭); ডা. এ টি এম রেজাউল করিম (চট্টগ্রাম-৭); ডা. আব্দুল বারী (রাজশাহী-৪); ডা. আব্দুর রহিম সরকার (গাইবান্ধা-৫) এবং ডা. ফখরুদ্দিন মানিক (ফেনী-৩)।

এর আগে, গত ৪ নভেম্বর ভোরে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালনসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতের প্রস্তুতির কথাও তুলে ধরে জামায়াতের আমির। 

তিনি বলেন, বিএনপির ২৩৭ জন প্রার্থী এখনো ঘোষণা হয়নি, অথচ জামায়াতে ইসলামি এক বছর আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। দ্রুতই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলেও তিনি জানান।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক চর্চাকে এগিয়ে নিতে মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থকে সামনে রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করা। তিনি আরো বলেন, ভিন্ন মত পোষণ করা গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত, তবে তা কখনো দ্বন্দ্ব বা সংঘাতে পরিণত হওয়া উচিত নয়।