১৭ বছর কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তার মুক্তিকে ঘিরে কারাফটকে জড়ো হয়েছিল লাখো মানুষ, তারা তাকে ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেন। বিপুল জনসমাগমই প্রমাণ করে, তিনি এখনো কতটা জনপ্রিয়।
তবে সবচেয়ে আলোচনার বিষয়— এত জনপ্রিয় হলেও বিএনপিতে তার কোনো পদ নেই। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, লুৎফুজ্জামান বাবরকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে বিএনপি?
লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে আরও দুইবার এমপি হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে বাবর পান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব, সে সময় তিনি বেশ প্রভাবশালী ছিলেন।
তবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় ধাক্কা আসে ওয়ান ইলেভেনের সময়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ২৮ মে গ্রেপ্তার হন তিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলায় দীর্ঘ কারাবাসে থাকতে হয় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে।
কারাবাসে থাকতেই এসে পড়ে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলনিষ্ঠ লুৎফুজ্জামান বাবর তখন বন্দী থাকায় বিএনপি তার আসনে অন্য একজনকে মনোনয়ন দেয়। তবে তিনি কারাগার থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।
এদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর—ভোটগ্রহণের মাত্র তিন দিন আগে—শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি বাবরকে বহিষ্কার করে। সে সময় তিনি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক। তবে এই বহিষ্কারাদেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভোটের কয়েকদিন পরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক চিঠির মাধ্যমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাবর ভবিষ্যতে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে অবদান রাখবেন বলে বিএনপি আশাবাদী।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলেও বাবরকে গত ১৭ বছর ধরে বিএনপির কোনো দলীয় পদ দেওয়া হয়নি। অথচ কারাগারে থাকা অবস্থায়ই দলের আরেক নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছিল।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। বিরোধী মত দমন, গুম, খুন, বিচারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। চার মেয়াদের শাসনামলে বিএনপি চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও সরকারের নির্যাতনের শিকার হন। কারাবরণ থেকে শুরু করে হত্যার শিকার হন বহু নেতাকর্মী।
তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়ে শেখ হাসিনা আশ্রয় নেন ভারতে।
শেখ হাসিনার শাসনামলেই লুৎফুজ্জামান বাবরকে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মামলাগুলোর আপিল শুনানি শেষে একে একে খালাস পান লুৎফুজ্জামান বাবর। সবশেষ আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার দুটি পৃথক রায়ে খালাস পাওয়ার পর তার কারামুক্তির পথ খুলে যায়। দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
তবে তুমুল জনপ্রিয় হলেও পদবিহীন এই নেতাকে বিএনপি কীভাবে মূল্যায়ন করবে—এটাই এখন রাজনৈতিক মহলের আলোচনার প্রধান বিষয়।