Image description

 চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই জামিয়া রশীদিয়া আহছানাবাদ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে যান জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।

এ সময় তিনি গোটা মাদ্রাসা কম্পাউন্ড ঘুরে দেখেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাৎকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত ইসলামের আমিরসহ অন্য নেতারা চরমোনাইতে এসেছেন। আল্লাহ যেন আমাদের ইসলামের পক্ষে, দেশের পক্ষে ও মানবতার পক্ষে ভালো কাজ করার তৌফিক দান করেন। আজ স্বাধীনতার ৫৪ বছর চলছে, কিন্তু এতদিন যারা দেশ পরিচালনা করেছিল তাদের দ্বারা আমাদের জাতির প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যেন সবাই পরামর্শভিত্তিক এ দেশটাকে সুন্দরভাবে এবং ইসলামের পক্ষে মানবতার পক্ষে কাজ করতে পারি সে তৌফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সবাইকে সামনে রেখে বলতে চাই, আমরা শুধু আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসি। আল্লাহ যেন আমাদের এ ভালোবাসাকে কবুল করেন। দেশের ১৮ কোটির কমবেশি মানুষ আছে, যার মধ্যে শতকরা ৯১ জন নিজেদের মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বাকি যারা আছেন তারাও এদেশের মানুষ, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের। আর সব মিলিয়েই আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, চরমোনাই পীর সাহেব বলেছেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে যে মর্যাদায় থাকার কথা তা আমরা পাইনি। এটার মূল কারণ দুর্নীতি আর দুঃশাসন। যেখানে আল্লাহতায়ালার বিধান থাকবে না সেখানে দুর্নীতি অবিসংবাদিত, আর দুঃশাসন সেখানে দুর্নীতির হাত ধরেই আসবে। নামাজে আল্লাহর বিধান মানলাম আর সমাজে মানলাম না সেখানে আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে মানলাম না। কিছু মানলাম আর কিছু মানলাম না তাহলে দুনিয়াতে লাঞ্ছিত হতে হবে আর আখিরাতেও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। আমরা মনে হয় সেই লাঞ্ছনার মধ্যে আছি কিছু মানা না মানার জন্য। কিন্তু আমাদের মনের আকাঙ্ক্ষা আমরা পুরোটা মানতে চাই। মদীনার বিধানের অধীনে সমস্ত ধর্মের মানুষ পূর্ণ নিরাপত্তার পাশাপাশি সকল নাগরিক সুবিধা পাবে। মুসলমান কিংবা অমুসলমান প্রশ্ন নয়, যদি রাষ্ট্রের সঙ্গে কেউ বেইমানি ও গাদ্দারি করে তাহলে ইসলাম তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। কোনো বিশেষ ধর্মের জন্য নয় এটা। ইসলাম শুধু জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী আন্দোলনের না, ইসলাম আল্লাহতাআলা দিয়েছেন সকল মাখলুকের জন্য এবং বিশেষ করে মানবজাতির জন্য।

এ সময় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দুদলের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন সেটা করে তারপর নির্বাচন চান তারা।

সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। আপনার আমার ঘর পাশাপাশি হলে আমরা কি কাঁটাতারের বেড়া দেই, দেইনা। পরস্পরের জন্য পরস্পরের দরজা খোলা থাকে, আমরা ভারতের কাছে সেই প্রত্যাশা করি। ভারত কাঁটাতারের বেড়া এখন দেয়নি, বহু আগ থেকে শুরু করেছে এবং অব্যাহত আছে। এটা আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফসল।

দুদলের সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চরমোনাই পীর বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি ইসলামের পক্ষে যেন আমরা একটা বাক্স পাঠাতে পারি। সে চেষ্টা আমাদের আগেও চলছে, এখনও চলছে। ৫৩ বছর পরে ৫ আগস্টে যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি এর মাধ্যমে ইসলামের পক্ষে একটি ভালো ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে যদি সময় উপযোগী পদক্ষেপ না নিতে পারি তাহলে এটা আমাদের জন্য অকল্যাণ এবং দুর্ভাগ্যের। এজন্য আমরা সবাই একত্রিত হয়ে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে যেন কাজ করতে পারি সেজন্য সবার দোয়া চাই।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক মাঠে যারা কাজ করে তাদের চিন্তার ব্যবধান থাকতেই পারে। আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করি ১০০ জনের মধ্যে ৯২ জন মতো মুসলমান এদেশে বসবাস করে। এখানে বাস্তবতা হলো ইসলামী নীতি আদর্শই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি অন্যান্য রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল নিজের স্বার্থে এবং দলের স্বার্থে আমাদের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে তারা মসনদে বসেছে। ইসলামের পক্ষে তাদের দ্বারা কোন ভালো কাজ লক্ষ্য করিনি বা তারা করেনি, জাতির জন্য পাইনি, দেশের জন্য পাইনি।

সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চিন্তা হলো আমরা কারও সিঁড়ি ও পরগাছা হবো না। আমরা নিজেরাই ইসলামের পক্ষে একটা শক্তিক অর্জন করব এবং ইসলামী শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে থাকব। আমরা আর ব্যবহৃত হতে চাই না। এ সময় দুদলের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করে বলেন, বর্তমান পরিবেশে আমরা কাছাকাছি চলে আসছি বলতে পারেন।

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের দাবি ওনাদের দাবি একই। আমাদের একটা রাজনৈতিক দাবির মধ্যেও কোনো কনফ্লিক্ট নেই, কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা কোনো পরামর্শ করিনি, অন্তর থেকে জাতির প্রয়োজনে বের হয়েছি।

মতবিনিময় শেষে উভয় দলের শীর্ষ নেতারা চরমোনাই দরবার শরীফের মসজিদে এক সঙ্গে জোহরের নামাজ আদায় করেন।