গত ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে পালটাপালটি হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
শনিবার রাতে বোয়ালমারী থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮৭৬ জন। একটি মামলা দায়ের করেন এ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক হিসেবে পরিচিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। মামলায় ৩৮ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩-৪শ জনের আসামি করা হয়।
মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর নাম রয়েছে। তাছাড়া সাবেক এমপি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুর নাম রয়েছে যথাক্রমে ২য় ও ৩য় নাম্বারে।
অপর মামলাটি দায়ের করেন এ আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থক উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান বাবু। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে। এছাড়া বিএনপির ১৮৮ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ২শ থেকে আড়াইশ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামের মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন উপলক্ষে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিকালে একটি মিছিল বের করেন। বিএনপি নেতা শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর অনুসারীরা সকালে মিছিল বের করার কথা থাকলেও তারা উপজেলা ও পৌর বিএনপির মিছিল বাধাদান করার জন্য বেছে নেয়। বিকাল ৪টার দিকে উপজেলা ও পৌর বিএনপির মিছিল বের হয়। মিছিলটি হারুন কমপ্লেক্সে সামনে গেলে শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু তার দলবল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা রামদা, ছ্যানদা, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, লোহার রড, বাঁশের লাঠি নিয়ে বিএনপির মিছিলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করে। এ সময় হামলাকারীরা ৮টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার নাসিরের সমর্থক ও মামলার বাদী বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে লোক ভাড়া করে এনে এবং আওয়ামী লীগের লোকদের দিয়ে আমাদের মিছিলে হামলা করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। অবিলম্বে বিএনপি নেতা শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর গ্রেফতার চাই এবং তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাই।
এদিকে বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থক মামলার বাদী মুজিবুর রহমান বাবু মামলায় উল্লেখ করেন, পৌর এলাকার ওয়াপদা মোড়ের হারুন কমপ্লেক্সের সামনে মিছিল করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় খন্দকার নাসিরের সমর্থকের তাদের ওপর হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এ সময় হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে। এ সময় হামলাকারীরা বেশ কিছু মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
মামলার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু বলেন, খন্দকার নাসিরের নির্দেশে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমি এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি করছি।
মামলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ঝুনুর সমর্থকেরা পরিকল্পিতভাবে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
মামলার বিষয়ে বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানান, হামলা, ভাঙচুর, মারপিটের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় এখনো কোনো আসামি গ্রেফতার নেই। আসামি গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।