আবু নাঈম মনির: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন ১৫ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান (মিরপুর-১৫) ও নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লাহ-১১ (চৌদ্দগ্রাম) ছাড়াও সম্ভাব্য এ তালিকায় রয়েছেন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) বিভিন্ন পর্যায়ের ১৩ জন চিকিৎসক।
তারা হলেন—অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর), অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল), অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর রাজশাহী সদর-২ (সদর), ডা. সুলতান আহমেদ বরগুনা ২ (পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী), ডা. একেএম ফজলুল হক চট্টগ্রাম-৯ (চান্দগাঁও, ডবলমুরিং), ডা. আবু বকর সিদ্দিক মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়), ডা. ফরিদুল আলম চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), ডা. শাহাদাৎ হোসেন চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক), ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা), ডা. মুহাম্মদ আবু নাছের চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, আংশিক পাচঁলাইশ), ডা. এসএম খালিদুজ্জামান (ঢাকা-১৭), ডা. এ টি এম রেজাউল করিম চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) ও ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ফেনী-৩ (দাগনভূঞা-সোনাগাজী)।
এনডিএফের অফিস সম্পাদক ডা. একেএম জিয়াউল হক আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে মেডিভয়েসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা. শফিকুর রহমান
এনডিএফ অফিস সম্পাদকের জামায়াতের তথ্যানুসারে, মিরপুর-১৫ আসনে লড়বেন দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে। তাঁর পিতা মরহুম মোহাম্মদ আবরু মিয়া এবং মাতা মরহুমা খাতিরুন নেছা। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
শফিকুর রহমান ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর পর ভর্তি হন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে (সিওমেক) তিনি। সেখান থেকে ১৯৮৩ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।
জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন ডা. শফিকুর রহমান। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সিওমেক ছাত্রশিবিরের সভাপতি এবং সিলেট শহর শাখার সভাপতির দয়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান ডা. শফিকুর রহমান। এরপর সিলেট শহর, জেলা ও মহানগরী আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে করেন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের (সদস্য) প্রত্যক্ষ ভোটে আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য জামায়াতের আমির হিসেবে প্রখমবারের মতো শপথ গ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের (সদস্য) প্রত্যক্ষ ভোটে দ্বিতীয় বারের মতো আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য তিনি আমীর হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন এবং সংগঠনের আমীর হিসেবে বহাল আছেন।
ডা. শফিকুর রহমান ১৯৮৫ সালে ডা. আমিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ডা. আমিনা বেগম অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে এফসিপিএস (কার্ডিওলোজি) অধ্যয়নরত কর্মরত। ছোট মেয়ে এমবিবিএস ও এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জনের পর একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। একমাত্র ছেলে এমবিবিএস শেষ করে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের
কুমিল্লাহ-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের জন্ম ১৯৫৮ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সৈয়দ পরিবারে। পিতা মাওলানা সৈয়দ মাজহারুল হক হায়দারি ছিলেন একজন ইসলামী ধর্মীয় প্রচারক, বক্তা ও পণ্ডিত। মা আকসির-ই-জাহান চৌধুরানী, চট্টগ্রামের ‘কাশগর’ মুসলিম জমিদার পরিবারের সদস্য। ডা. তাহেরের পাঁচ ভাই ও তিন বোন।
তিনি অষ্টম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন এবং প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও নায়েবে আমীর।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের পঞ্চম শ্রেণী ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। বৃহত্তর কুমিল্লা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন করেন।
তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. হাবিবা আক্তার চৌধুরীর (এমবিবিএস, এম-ফিল) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যিনি ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমাজিং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দম্পতির তিন মেয়ে এবং একটি ছেলে আছে।
তিনি কলেজ জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। যোগদানের দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্য হন। পরবর্তীতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন এবং ১৯৮৫-৮৬ এবং ১৯৮৬-৮৭ সেশনে কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) শাখা সভাপতি ও ঢাকা শহর শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢামেকে অধ্যয়নের সময় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র কেন্দ্রীয় ইউনিয়নের (ঢামেকসু) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল
শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল। তিনি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য।
অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান।
তিনি ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি দি ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের অন্যতম পরিচালক।
এর আগে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হৃদরোগ বিভাগের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। ডা. জেহাদ খান কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ এলাকার সন্তান।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর
ডা. একেএম জিয়াউল হক তথ্য মতে, রাজশাহী সদর-২ (সদর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মনোয়ন পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তিনি রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডা. সুলতান আহমেদ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা ২ (পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী) আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ডা. সুলতান আহমেদ।
ডা. একেএম ফজলুল হক
এনডিএফ অফিস সম্পাদকের তথ্যানুসারে, ডা. একেএম ফজলুল হক চট্টগ্রাম-৯ (চান্দগাঁও, ডবলমুরিং) আসনে জামায়াতের মনোয়ন পেয়েছেন।
চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, উদোক্তা, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক হিসেবে সুমান কুড়ানো ডা. ফজলুল হক চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডা. আবু বকর সিদ্দিক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে (ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়) জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন ডা. আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ইউরো বাংলা হার্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
ডা. ফরিদুল আলম
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ডা. ফরিদুল আলম। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।