এদিকে রাষ্ট্র সংস্কারে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং গণভোট নিয়ে তৈরি সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সরকার। এ নিয়ে দলগুলো বেঁধে দেওয়া সময়ে সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে সরকার নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। সেই প্রস্তুতিও চলছে।
এদিকে চার দিন পার হলেও সমঝোতার জন্য দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।
সূত্র মতে, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত সোমবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার আহবান জানানো হয়। বিশেষ করে গণভোট কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে ‘জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ গ্রহণের জন্য বলা হয়।
এ জন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলেও সমঝোতার বিষয়ে কোনো উদ্যোগের কথা জানানো হয়নি। তবে একটি ‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরি করতে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করলেও জামায়াতে ইসলামী রাজপথে শক্তি প্রদর্শনকে গুরুত্ব্ব দিচ্ছে। জামায়াতসহ আটটি ইসলামী দলের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার যমুনা অভিমুখে মিছিল এবং প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয়টি দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টি। গত বুধবার রাজধানীর পল্টনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এই ৯টি দলের এক জরুরি সভায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনার কথা জানান দলগুলোর নেতারা। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানে কোনো আশার আলো দেখছেন না তাঁরা।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় বসানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু অগ্রগতির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ রাজপথে যে কর্মসূচি দেখছি, ঘেরাও কর্মসূচি হলো, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়িত না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকা অচল করে দেওয়ার ঘোষণা। তার মানে রাজনৈতিক বিষয়টি রাজনীতির মধ্যে থাকছে না; এটা মাঠে শক্তি প্রদর্শনের বিষয় হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিন সময় দিয়ে সরকার চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। দলগুলোর যে বিপরীতমুখী অবস্থান, সেখান থেকে সমঝোতায় পৌঁছা অসম্ভব। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করে রাজপথ দখলের কর্মসূচি দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতিকে অনিশ্চিত জায়গায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে জনগণের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে।’
সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে এই কাজ সম্পন্ন হতে পারে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ‘আন-অফিশিয়ালি’ কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে, যা আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে প্রশ্ন করা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো সাড়া না দিলে সরকার কী করবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক অনেক মিটিং হচ্ছে। তবে আমরা আশা করব, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো আলাপ-আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গোটা জাতি এখন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের স্টেজ তৈরি হয়েছে। জাতি যেন খুব দ্রুতই নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে।’