ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৬৩ টি আসন এখনও ফাঁকা। ফাঁকা আসনগুলোর মধ্যে ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনও রয়েছে।ফলে এ আসনটিতে কে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন সেটি এখন স্থানীয়দের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ আসনে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন। তিনি পুনরায় বিএনপিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তিনি বহিষ্কারের আগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে ছিলেন।
দ্বাদশ নির্বাচনের আগে কিংস পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন ফরিদপুরের এই আলোচিত রাজনীতিক।তিনি নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। পরে বিএনপি তাকে ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করে। এলাকায় তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয। তিনি দ্বাদশ নির্বাচনে জামায়াত হারান। ৮ ভাগের এক ভাগ ভোটও পাননি।তিনি ২২ হাজার ৪৬৫টি ভোট পেয়েছিলেন।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার দল পরিবর্তনের পর এবার আবু জাফর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে শেষবারের মতো ধানের শীষের পতাকাতলে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ফরিদপুর-১ আসনে শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফরের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও তার প্রত্যাবর্তনের খবরে আশাবাদী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপি এই আসনে পিছিয়ে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য নেতা হিসাবে শাহ্ আবু জাফরই হতে পারেন দলের শেষ ভরসা। একাধিক সূত্র বলছে, সব কিছু ঠিক থাকলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাবেন চারবারের এই সাবেক সংসদ সদস্য।
তবে এ বিষয়ে সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমান বিএনএম নেতা শাহ্ আবু জাফর যুগান্তরকে বলেন, এ আসনের মনোনয়ন স্থগিত রয়েছে। তবে গুঞ্জনের বিষয়টি শুনেছি। দেখা যাক কী হয়। এখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া কেউ কিছু বলতে পারবেন না। বিএনপিতে যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপিতে ফিরে এলেই কি মনোনয়ন পাওয়া যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? বিষয়টি শুধু তারেক রহমান জানেন। দেখা যাক কী হয়।
বিএনপি এবার এলাকায় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিচ্চে। শাহ জাফর এই এলাকার চারবারের এমপি। তিনি ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগ, ৮৬ সালে বাকশাল, ৮৮ সালে অপর একটি দল ও সর্বশেষ ২০০৫ সালে উপ-নির্বাচনে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
ফরিদপুর-১ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে বিবেচিত। এই আসনে বিগত ৩৪ বছরে ৮টি সংসদ নির্বাচনে সাতবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপি জয় পেয়েছে। শুধু ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছিলেন। এই আসনে মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহসভাপতি সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এই দুই নেতা নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। যদিও সবাই বলছেন, দল যাকেই প্রার্থী করবে, তার পক্ষেই কাজ করবেন।
এ বিষয়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিগত প্রায় ২৫ বছর পর এ আসনে বিএনপি প্রার্থীর জয়ের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এ আসনে ঘোষণা আসেনি। হয়তো বিএনপির শরিক দলের কাউকে এখানে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য খালি রাখা হতে পারে।
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু যুগান্তরকে বলেন, এ আসনটি স্থগিত রয়েছে। আমি আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় ছিলাম এবং আছি। আমি ছাত্রদল থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার মধ্যে কোনো মিশেল নেই।