ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক শেখ হাসিনা দিল্লিতে নিরাপদে বসে নির্বাচন ঠেকানোর হুঙ্কার দিচ্ছেন। সাংগঠনিক কর্মকা- নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভোট ঠেকাতে দেশের আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির নির্দেশনা দিচ্ছেন। আবার দেশের ভেতরে জামায়াত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নির্বাচনের আগে গণভোট দাবিতে হুমকি দিচ্ছে। দলটির গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতা গতকাল পাঁচ দফা দাবিতে হুমকি দিয়েছেন। এক নেতা কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন, আরেক নেতা হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, আঙুল বাঁকা করব’। দিল্লির নাচের পুতুল হাসিনা ও দেশের জামায়াতের দুই নেতার হুমকির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছে অনেকেই। নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে: আশঙ্কা প্রকাশ করে গত ২৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো না, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড় আসুক, আমাদের সেটি অতিক্রম করতে হবে।’ প্রধান উপদেষ্টার সেই আশঙ্কা বিদেশে থেকে হাসিনা এবং দেশে জামায়াত নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছেন? আর জামায়াতের নায়েবে আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের হুমকি কী প্রধান উপদেষ্টার ‘হঠাৎ আক্রমণ’ আশঙ্কার ইঙ্গিত?
ভারত থেকে হাসিনার আন্দোলনের হুঙ্কার ও দেশে জামায়াতের জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে হুঙ্কার নিয়ে সর্বত্রই চলছে বিতর্ক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘দেশে কিছু ব্যক্তি নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত বা বাতিল করার ষড়যন্ত্র করছেন। দেশে কিছু ব্যক্তি নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে নির্বাচন নিয়ে সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এ সংকট মোকাবিলায় নির্বাচন সফল করতে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।’ নির্বাচন পেছানো ষড়যন্ত্রে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অনেক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছি। বিএনপি এখনো কোনো বিষয়ে রাস্তায় নামেনি। আপনারা মনে রাখবেন, বিএনপি কোনো ভেসে আসা দল নয়। পানি ঘোলা করবেন না। আপনারা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবেন না। দয়া করে দেশের মানুষকে অশান্তিতে নেয়ার ব্যবস্থা করবেন না। আমরা বহু সংগ্রাম করেছি, বহু লড়াই করেছি। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ২০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আপনারা নতুন করে শুরু করছেন। আপনারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন। সেটি এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’
‘ছাগল নাচে খুঁটির জোরে; কুত্তা নাড়ায় লেজ; বিকেল বেলায় সূর্য হারায় দুপুর বেলার তেজ/বকধার্মিক মৎস্য ধরে সাধুর লেবাস পরে; ধর্মকর্ম শিকায় ওঠে জালিম লোকের ঘরে’:শফিকুল ইসলাম বাদল। অপরিচিত কবি কোন প্রেক্ষাপটে এই কবিতা লিখেছেন তা যেমন অজানা, তেমনি হঠাৎ করে কোন খুঁটির জোরে গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন দাবিতে জামায়াত নেতারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন সেটিও কী অজানা! সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। নানাজনে নানা মন্তব্য করছেন। কেউ লিখেছেন: জামায়াতের খুঁটির জোর ভারত; কেউ লিখেছেন, জামায়াতের খুঁটির শক্তি অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেই রয়ে গেছে।
সারাদেশে যখন নির্বাচনী আবহ; বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর চলছে প্রচার-প্রচারণা; কোটি কোটি ভোটার উৎসবের আবহে প্রচারণা চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার না এলে বিনিয়োগ করবে না বলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার ক্ষমতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ ও পেশাজীবীরাসহ সর্বমহল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতিকে সচল রাখতে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে। সেনাবাহিনী থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত যেই রূপরেখা প্রণয়ন করেছে, দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সেই রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আসন্ন নির্বাচনের উপর ভিত্তি করেই সেনাবাহিনী যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সবাই যখন নির্বাচন চাচ্ছে এবং নির্বাচনের হাওয়া রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে বইছে; তখন হঠাৎ করে হুমকি-ধমকি কেন? মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতের মতো একটি সীমিত জনসমর্থিত দলের পক্ষে এমন হুমকি দেয়ার নেপথ্যের রহস্য কী? ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করেছে’ দেশ-বিদেশে তিনি এমন বার্তাও দিয়েছেন। তাহলে কী তার সরকারের ভেতরে কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার বাসনায় জামায়াতকে খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন? ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ শাসনামলে বছরের পর বছর ধরে গর্তে লুকিয়ে থাকা এবং দেশের অস্থিত্বের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া দলটির হঠাৎ করে জনগণের মতামত নিয়ে গণভোট আর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের এত দেশপ্রেম?
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঁচ দফা দাবির স্মারকলিপি দিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজন করতে হবে। আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’ দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, আঙুল বাঁকা করব; ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই, বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।’ এর কয়েক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দলটির নেতারা দেখা করে সাংবাদিকদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার প্রসঙ্গ তোলেন। অতঃপর ৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমত প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে: এগুলোসহ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ উদ্যোগ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আইন উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন: অন্তর্বর্তী সরকার কী জামায়াতের পরামর্শে চলছে? রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা সংকটের সুরাহা করলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আট মাস ধরে সংলাপ করা হলো কেন?
দেশের রাজনীতিতে জামায়াত কখনোই গুরুত্বপূর্ণ শক্তি নয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর জামায়াত রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হলেও কখনোই তেমন সুবিধা করতে পারেনি। এরশাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১০ আসন পেলেও নব্বইয়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপিকে জনসমর্থনের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সংসদে গেছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার অনুকম্পায় মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। বিএনপির সমর্থন ছাড়াও যে সব নির্বাচন করেছে তাকে জামায়াত তিনটি আসনের বেশি পায়নি। এমনকি ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে বিএনপি ছায়ামতে দলটির কার্যক্রম চালিয়েছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণ নেতাদের-এনসিপিকে সভা-সমাবেশে মানুষ সাপ্লাই দিয়ে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত এনসিপির পৃষ্ঠপোষকতা পায়। ফলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের প্রথম দিকে দলটির বুদ্ধিজীবীরা প্রচারণা শুরু করেন বিএনপির উচিত জামায়াতের নেতৃত্বে মেনে রাজনীতি করা। সোশ্যাল মিডিয়ায় দলটি এমন বার্তা দিয়ে প্রচারণা শুরু করে। এমনকি দলটি একদিকে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দাবির করছে অন্যদিকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপির দলীয় প্রার্থী ঘোষণা বিলম্ব দেখে দলটির নেতারা ধরে নিয়েছিলেন, চাঁদাবাজ ট্যাগ খাওয়া বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়বে। কিন্তু বিএনপির ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। এ দৃশ্য দেখে জামায়াতের হতাশা বাড়তে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়: বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ দখলে নিয়ে ফেলেছে। জামায়াত প্রত্যাশা করেছিল, দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে প্রতিটি আসনে বিরোধ হবে এবং সংঘাত-সংঘর্ষে রক্ত ঝরবে। কিন্তু সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচনের মাঠ দখলে নিয়ে ফেলেছে। ফলে জামায়াত কার্যত নির্বাচন ঠেকাতে পাঁচ দফা দাবির আন্দোলনে নেমেছে। আর যে দল দেশের কোনো জাতীয় নির্বাচনে ৮ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি এবং এককভাবে নির্বাচন করে তিন আসনের বেশি পায়নি, সে দলকে অন্তর্র্বর্তী সরকার এত গুরুত্ব দিচ্ছে কেন? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা কি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার স্বপ্ন দেখছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহিদ উর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার অপরাজনীতি করছে। যদিও তাদের রাজনীতি করার কথা নয়। সরকার যা করছে তাতে আগামীতে রাজনৈতিক পরিম-লের জন্য কাল হয়ে যাবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার দায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিতে হবে। কারণ, তিনি ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ছিলেন এবং তিনিই প্রথম জুলাই জাতীয় সনদে প্রথম স্বাক্ষর করেছেন। এখন মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার জামায়াতকে আন্দোলনে নামিয়েছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি: এগুলো বিএনপিকে চাপে ফেলতে করা হচ্ছে। জামায়াত এসব দাবিতে আন্দোলন করবে আর সরকার বিএনপিকে বলবে, ঠিক আছে: পিআর পদ্ধতির নির্বাচন বাদ দেয়া হচ্ছে, আপনারা অন্য দাবি মেনে নিন। উপদেষ্টা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে প্রমাণ হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার অপরাজনীতি করছে। উপদেষ্টারা আগে গণভোট নিয়ে তেমন বাগাড়ম্বর না করলেও ওই বৈঠকে তিনজন উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করা যেতে পারে: এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে এবং সে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরও গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।’
ডা. জাহিদ উর রহমানের অভিযোগ অনুযায়ী, তিন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে জামায়াত নেতা ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বক্তব্যের যোগসূত্র পাওয়া যায়। ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোট করতে আইনি কোনো বাধা নেই।’ প্রশ্ন হচ্ছে: অন্তর্বর্তী সরকার কার পক্ষে খেলছে? জামায়াত নেতা হুমকি দিয়ে আরো বলেছেন, আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে আবার রক্ত দেবো, প্রয়োজনে আবার জীবন দেবো।’ প্রশ্ন হচ্ছে: জামায়াত নেতারা কখন কোন আন্দোলনে রক্ত আর জীবন দিয়েছেন? হাসিনার শাসনামলে শেষ ১০ বছর গর্তে লুকিয়ে থেকে আওয়ামী লীগের ভেতরে গুপ্ত জামায়াত এবং ছাত্রলীগে গুপ্ত জামায়াত হয়ে ছিল। সেই দল রক্ত আর জীবন দেবে? ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রতিশোধ নিতে শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা যখন তুঙ্গে তখন জামায়াত রাজপথে রক্ত আর জীবন দিতে চাচ্ছে কেন? জামায়াতকে দেশকে সুদানের পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায়? দেশের অর্থনীতির মেরুদ- ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন না হলে একদিকে অর্থনীতির বিপর্যয় ঘটবে, অন্যদিকে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ম্লান হয়ে যাবে। রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ, হানাহানি বাড়বে। যেমন পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে সুদান। সুদানে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংকট এবং গৃহযুদ্ধ তার নেপথ্যে যেখানকার ইসলামপন্থি দলগুলোকে দায়ী করা হচ্ছে। সুদানের সংকটকে ইসলামী রাজনীতির নামে হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারণা রয়েছে। তাহলে কি জামায়াত বাংলাদেশকে সুদানের মতো গৃহযুদ্ধের দিকে নিতে চাচ্ছে? প্রবাদে রয়েছে: ‘অতিবাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে।’ বিএনপির মহাসচিব গতকাল যশোরে বলেছেন, ‘আপনারা মনে রাখবেন, বিএনপি কোনো ভেসে আসা দল নয়। পানি ঘোলা করবেন না।’