লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ওই হামলার আগে অবশ্য তারা কয়েকটি এলাকা থেকে বেসামরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
জাতিসংঘের লেবানন বিষয়ক অন্তর্বর্তী বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) জানিয়েছে, ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তারা ইসরায়েলকে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং লেবাননের পক্ষগুলোকেও সংযত থাকার অনুরোধ করেছে।
লেবানন সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক নীতির ধারাবাহিকতা, যার লক্ষ্য লেবাননের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা এবং দক্ষিণাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ বৃদ্ধি।
প্রায় এক বছর আগে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বন্ধে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, তা এখনও কার্যকর থাকা অবস্থাতেই হামলা চালায় তেল আবিব। এরই মধ্যে লেবানিজ সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চল থেকে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি সরাতে অভিযান চালাচ্ছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে হামলায় একজন নিহত হন এবং বিকেলে আরও একজন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেয়ি তিনটি এলাকা—আইতা আল-জাবাল, আল-তাইয়িবা ও তায়র দেব্বা গ্রাম থেকে একযোগে মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে আরও দুটি এলাকার জন্য একই নির্দেশ জারি করা হয়। এসব স্থান ইসরায়েল সীমান্তের চার থেকে চব্বিশ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
ইসরায়েলি ঘোষণা অনুযায়ী, প্রত্যেক এলাকায় নির্ধারিত স্থানের ৫০০ মিটারের মধ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। লেবাননের সিভিল ডিফেন্স বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। নির্দেশের একঘণ্টা পরই বিমানহামলা শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরই আকাশে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, ইসরায়েল হয়তো আবারও পূর্ণমাত্রার বিমানহামলা শুরু করতে পারে। তায়র দেব্বার মেয়র ফারিদ নাহনুহ বলেন, আমরা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছি। যদি এই ধারা চলতেই থাকে, তাহলে কোনও আশা নেই। পরিণতি কোথায় গিয়ে থামবে, কেউ জানে না।
ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোশিয়ান বলেন, ইসরায়েল তার সব সীমান্ত রক্ষা করবে এবং হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে জোর দেবে। হিজবুল্লাহকে আমরা পুনরায় শক্তি অর্জন করতে দেব না।
এদিকে, হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও ইসরায়েলকে প্রতিরোধের ‘বৈধ অধিকার’ তাদের আছে। সংগঠনটি পুরোপুরি নিরস্ত্র না হলেও দক্ষিণাঞ্চলে সেনাবাহিনীর অভিযানে বাধা দেয়নি এবং গত এক বছরে ইসরায়েলে কোনও হামলাও চালায়নি।