আরিফুল হক চৌধুরী কি করবেন? সেটি আরিফই জানেন। অন্য কেউ না। সিলেটের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ভোটার সবাই এ কথা বিশ্বাস করেন। সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন না আরিফ- সেটিও মানেন সবাই। এবার সিলেট-৪ আসন আরিফের জন্যই বরাদ্দ ছিল। সে খবর অনেক আগে থেকে ভোটের মাঠে চাউর হয়। কিন্তু নাটকীয়তা জিইয়ে রেখেছিলেন আরিফ নিজেই। সিলেট-১, সিলেট নগর ছেড়ে কোথাও যাবেন না। সে ঘোষণা তার তরফ থেকে দেয়ার পর নাটক আরও জমে ওঠে। চেয়ে বসেন সিলেট-১ আসন। নামেন প্রচারণায়ও। কিন্তু ১৮’র নির্বাচন করে মর্যাদার এ আসনে ‘থিতু’ হয়েছেন মুক্তাদির। তবু আরিফ মাঠেই ছিলেন। বৈষম্যের সিলেটের ডাক দিয়ে সব মত ও পথের মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে নামেন। দেখান শক্তিমত্তাও। কিন্তু বিএনপি’র সিদ্ধান্তে পরিবর্তন হয়নি। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরেই সিলেট সদর আসনে ভরসা রাখলো বিএনপি। ঘোষণা হলো নাম। এখন আরিফ কী করবেন? সিলেট-৪ আসনে তার অনুমতি নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী।
ভোটের মাঠে নেমে সাড়া ফেলেন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। মাঠে সরব ছিলেন গোয়াইনঘাটের দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন। স্থানীয়-অস্থানীয় প্রার্থী বিতর্ক তুঙ্গে। জমিয়তের চোখও এ আসনে। দলটির শক্তিশালী প্রার্থী এডভোকেট মোহাম্মদ আলী মাঠে। শক্তির জানানও দিচ্ছেন। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ভোটে ফ্যাক্টরও তিনি। আরিফের ‘না’ সূচক ইঙ্গিতে সবাই সরব। একটি আসন নিয়ে বহু হিসাব। ভোটের হিসাব নিয়ে নানা মেরূকরণ। জামায়াতের প্রার্থী জয়নাল আবেদীন কম শক্তিশালী নন। তলে তলে অনেক এগিয়েছেন। অথচ সিলেট-৪ আসনটি যে বিএনপি’র শক্তিশালী ভোটব্যাংক, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বিএনপিকে ধানের শীষ মাঠে রাখতে হবে। প্রার্থীও হতে হবে শক্তিশালী। নতুবা আসনটি হাতছাড়া। বিকল্প হিসেবে আছে জমিয়ত। সেটি বিএনপি’র কর্মী সমর্থকরা মানছেন না। ২৩৭ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণার পর আসনের প্রার্থী নিয়ে মেরূকরণ আরও জটিল হয়ে ওঠে।
মঙ্গলবার ঢাকায় গেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। নিজ থেকেই তার এ যাওয়া। সিদ্ধান্ত তিনি কখনো একা নেন না। নিজের যেকোনো সিদ্ধান্তে তিনজনকে প্রাধান্য দেন তিনি। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্ত তিনি কখনোই অমান্য করেননি। সব সময় মেনেছেন, এখনো তার ব্যত্যয় হয়নি। আসন্ন নির্বাচনে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন তিনি, সেটি নিয়ে নিজেও সিদ্ধান্তহীনতায়। ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন- বুধবার রাতেই দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছেন আরিফ। মেয়র হয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা পাননি। এবার এমপি হলে মন্ত্রী হতে চান। এমন ইচ্ছাই তার। সিলেট-৪ আসনে গেলে ফলাফল আসবে কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হবে কী আরিফের- এমন জল্পনা ছিল। চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার পর আরিফের মতামত পরিবর্তন হলো। ঘনিষ্ঠজনদের দাবি-চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তেই তিনি সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। সেখানে থেকে কথা হয়েছে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। আরিফের এক সিদ্ধান্ত মনোনয়ন নিয়ে উত্তেজনার পারদে থাকা সিলেট-৪ আসন নীরব হয়ে পড়েছে। নিজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা নীরব হয়ে পড়েছেন। জমিয়ত প্রার্থীও কিছুটা ব্যাকফুটে। জামায়াতের ভেতরেও অস্বস্তি। আরিফকে ঠেকানো সম্ভব নয়- এমন কথা দলের কর্মীদের মুখে রয়েছে। সাজানো মাঠ নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রার্থী জয়নাল আবেদীন। নতুন সুর তুলতে চাইছে তারা। আসনের বাইরে প্রার্থী চাই না- এ নিয়ে ভোটের মাঠে সাড়া ফেলতে চাইছেন। কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। আরিফে খুশি ভোটাররা। এমনটিও চাওয়া ছিল তাদের। সিলেটের মধ্যে অবহেলিত এলাকা সিলেট-৪। খনিজ সম্পদে ভরপুর। আছে পাথর ও বালু কোয়ারি। জেলার বাইরের মানুষের আধিপত্য আছে এ আসনের ভোটে। আরিফ উন্নয়নের প্রতীক। দুইবারের মেয়রে সিলেট নগরকে সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। উন্নয়ন আকাক্সক্ষায় আরিফের দিকে তাকিয়ে আছেন জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের মানুষ। আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তিনি সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার ফোন পেয়েছেন। তিনিও মত দিয়েছেন। দল থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর তিনি ভোটের মাঠে নামবেন।
তিনি বলেন- বিএনপি’র কর্মী হিসেবে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে হবে। তিনি কখনোই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেননি। দলীয় সিদ্ধান্তেই মেয়র পদে নির্বাচন করেননি। এদিকে- সাবেক মেয়র আরিফের সিদ্ধান্তে সিলেট-৪ আসন যেমন নীরব হয়েছে, তেমনি আসন ভাগাভাগির হিসাবও পরিষ্কার হয়েছে। এ আসনটি আর হাতছাড়া করবে না বিএনপি, এমনটি নিশ্চিত। ফলে সিলেট-৫ আসন নিয়ে এখন জল্পনা তুঙ্গে। এ আসনে এখনো বিএনপি তার দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি। জেলার অন্য চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আরিফ যেমন বিএনপি’র প্রার্থী, তেমনি আলেম-ওলামাদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। কখনো তিনি আলেম-ওলামাদের সঙ্গ ছাড়েননি। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পূর্ব সিলেটে জামায়াত ও জমিয়তের মধ্যে তীব্র বিরোধ ছড়িয়ে পড়েছিল। হরিপুর ও কানাইঘাট মাদ্রাসার আলেম-ওলামারা জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছিলেন। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠার আগেই আরিফের নেতৃত্বেই ওই ঘটনাটির মীমাংসা হয়েছিল। এম. সাইফুর রহমান যখন সিলেট-৪ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন আরিফই ছিলেন সাইফুরের ছায়াসঙ্গী। ফলে এ আসনের মানুষের সঙ্গে আরিফের সম্পর্ক আগে থেকেই রয়েছে।