আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য দুটি দল হচ্ছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কবাসী) ও বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি। তবে দল নিবন্ধনের তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছে 'আমজনতার দল'। এরপর মঙ্গলবার বিকাল থেকেই আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মূলক ফটকে আমরণ অনশনে বসেন দলটির সদস্য সচিব তারেক রহমান।
এদিকে, বুধাবর (৫ নভেম্বর) দলটিকে নিবন্ধন না দেওয়ার কারণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সেখানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০খ (১) (ক) (ই) এর শর্তাবলী সঠিকভাবে পালন না করা; দুই-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দফতরের বাড়ি ভাড়ার রসিদ, চুক্তিপত্র বা মালিকানা দলিল সংযুক্ত না করা; দলের নামে রক্ষিত ব্যাংকের তথ্য দাখিল না করাসহ বেশ কয়েকটি কারণ দেখানো হয়েছে।
যদিও ইসির এই চিঠিকে প্রতারণামূলক বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সদস্য সচিব তারেক রহমান।
আম জনতার দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার কারণ জানিয়ে ইসির দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, “আমজনতার দল (এজেডি) নামীয় রাজনৈতিক দলের ২০২৫ সালের ২০ এপ্রিল তারিখের আবেদন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক যাচাই করা হয়েছে। দলটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০খ (১) (ক) (ই) এ বর্ণিত কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস, অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০ (একশত) উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় অফিস প্রতিষ্ঠা যার প্রত্যেকটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ (দুইশত) ভোটারের তালিকাভুক্তির শর্তাধীনে আবেদন করেছে। উক্ত আবেদনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ এর শর্তাদি পালনে ঘাটতি পাওয়া যায়।”
চিঠিতে দলটির আবদনে যেসব ঘাটতি উল্লেখ করা হয়েছে-
১। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০খ (১) (ক) (ই) এর শর্তাবলী সঠিকভাবে পালন করা হয়নি;
২। দুই-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তরের বাড়ি ভাড়ার রসিদ। চুক্তিপত্র/ দলের মালিকানা দলিল সংযুক্ত করা হয়নি;
৩। ১০০ উপজেলা/থানা এর ক্ষেত্রে কমিটির তালিকা ও দপ্তরের বাড়ি ভাড়ার রসিদ। চুক্তিপত্র/ দলের মালিকানা দলিল সংযুক্ত করা হয়নি;
৪। দলের নামে রক্ষিত ব্যাংকের তথ্য দাখিল করা হয়নি;
৫। দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ আবেদনের সাথে সংযুক্ত করা হয়নি;
৬। নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য দল প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র সংযুক্ত করা হয়নি;
৭। গঠনতন্ত্রে কোনও পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্য পদ সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়নি;
৮। গঠনতন্ত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা ছাত্র, বিভিন্ন পেশার সদস্য এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন না থাকার বিধান রাখা হয়নি;
৯। দলটির কোন দলিল বা কার্যক্রম সংবিধান পরিপন্থী নয় এবং দলে বাংলাদেশ কোলাবরেটর (স্পেশাল ট্রাইবুনাল) অর্ডার ১৯৭২ এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবুনাল) আইন, ১৯৭৩ এর অধীন দন্ডিত কোনও ব্যক্তি নেই মর্মে দলের প্রধানের ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র দাখিল করা হয়নি।
দলটির নিবন্ধন না পাওয়ার প্রসঙ্গে চিঠিতে আরও বলা হয়, “মাঠ পর্যায়ের তদন্ত কর্মকর্তাগণ কর্তৃক প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন ও অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের তথ্য সঠিক পাওয়া যায়। তবে, সরবরাহকৃত ২২টি জেলার মধ্যে ২০টি জেলায় সঠিক ও কার্যকর অফিস থাকার তথ্য পাওয়া যায় এবং ২টি জেলায় সঠিক ও কার্যকর অফিস থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।”
এছাড়াও, সরেজমিন যাচাইয়ে নিবন্ধনের শর্তানুযায়ী ১০০টি উপজেলা/থানা অফিসের মধ্যে ৩৩টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় অফিস ও ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকার তথ্য পাওয়া যায় এবং অবশিষ্ট উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় সঠিক ও কার্যকর অফিস এবং ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, দলের বিভিন্ন দলিলপত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে অনশন পালন করছেন দলটির সদস্য সচিব তারেক রহমান। তার শারীরিক অবস্থাও দুর্বল হয়ে এসেছে। সকালে তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
ইসির চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে অনশনরত তারেক রহমানের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “ইসি আমাদের একটা প্রতারণামূলক একটা চিঠি দিয়েছে। আমরা নাকি ব্যাংক তথ্য দেই নাই। ৩৩ পার্সেন্ট নারীর বিধান রাখা হয়নি। গঠনতন্ত্রে আছে স্পষ্টভাবে যুব সংগঠন বা ছাত্র সংগঠন থাকা যাবে না বলে উল্লেখ আছে। আপনারা জানেন কোনও ছাত্র সংগঠন আমরা খুলি নাই এখন। এগুলো তারা একটা মিথ্যা ক্লেইম করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের বলছে ২২টা জেলায় অফিস লাগবে, ২০টা জেলায় পেয়েছে আমাদের অফিস। দুইটা জেলায় নাকি পায়নি। তো আমাদের তো ৪৩টা জেলায় কমিটি আছে। আর যদি না পায় তাহলে আমাকে ফোন দিয়ে বলতো যে আপনাদের ৪৩ জেলার মধ্যে থেকে আর কোন দুইটা দেখাবেন আমাদের দেখান। তারা এগুলো না করে আমাদের সঙ্গে শয়তানি করছে।”
তারেক আরও বলেন, “পলিটিক্যাল উইলে, স্টেট উইলে আমাদের আটকিয়ে দিয়েছে। অথবা ইন্টারন্যাশনাল কোনও চক্রান্ত হতে পারে বা বিদেশি বন্ধুরা চায় না আমরা নিবন্ধন পাই; এরকম হতে পারে। আমরা তো সভেন্টিন নিয়ে গবেষণা করি, কাজ করি তো এটা তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সার্বভৌমত্ব নিয়ে স্বনির্ভরতা নিয়ে এগুলো তো বিদেশি শক্তির একটা উল্টা ন্যারেটিভ। আবার ডক্টর ইউনূস স্যারের অনেক সমালোচনা করেছি, বকবাজি করেছি। ওনার কর ফাঁকি নিয়ে কথা বলছি, লাইসেন্সগুলো বলছি...এগুলো নিয়েও রাগ করতে পারে। জানি না একটা বিপদে আছি আমরা।”
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনশন কন্টিনিউ করছি, জানি না আর কিছুই।”
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) চূড়ান্ত পর্যালোচনা শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন দাবি-আপত্তি চেয়ে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। এরপর দাবি-আপত্তি আসলে তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত নিবন্ধন প্রদান করা হবে।
উৎস: বাংলাট্রিবিউন।