Image description

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজীবন সদস্য পদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু)। এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন নির্বাচিত নোতারা। দ্বিতীয় সাধারণ সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিওয়া হবে। ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মহিউদ্দিন খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডাকসুর কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করছেন এবং কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এমন প্রশ্নে এজিএস বলেন, ‘ডাকসুর কার্যক্রম এ পর্যন্ত আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই পরিচালনা করছি। নির্বাচনের আগে আমাদের অঙ্গীকার ছিল, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। এখনও আমরা সে চেষ্টাই করছি। প্রতিশ্রুত কাজগুলো দুটি ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, অস্থায়ী বা তাৎক্ষণিক সেবা সম্পর্কিত কাজ; দ্বিতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত পরিবর্তন।’

‘২০১৯ সালের ডাকসুতে যেমন দ্বিতীয় সাধারণ সভায় তাকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে ২০২৫ সালের ডাকসুর দ্বিতীয় সাধারণ সভায় সদস্যপদ বাতিল করা হবে। সব নির্বাচিত প্রতিনিধি সিদ্ধান্তটিতে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। ফলে এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’ -মহিউদ্দিন খান, এজিএস, ডাকসু

তিনি বলেন, ‘সেবা সম্পর্কিত কাজের কিছু এখন দৃশ্যমান হয়েছে, আর কিছু কাজ শিগগিরই হবে। আর নীতিগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনেক কাজ এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এসব কাজ আমরা শুরু করব এবং ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাব।’

ডাকসুর কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না জানতে চাইলে মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনো শক্তি আমাদের সরাসরি বাধা দিচ্ছে না। প্রশাসনিক কিছু জটিলতা অবশ্য আছে। আমরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, বিশেষ করে অটোমেশনসহ নানা সার্বিক বিষয় নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্য অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়েও এক ধরনের আমলাতান্ত্রিক ধীরগতি আছে—ফলে অনেক কাজ সময়মতো সম্পন্ন হচ্ছে না।’

ডাকসুর কার্যক্রম নিয়ে নানা মানুষ নানা ধরনের সমালোচনা করছে সেগুলোকে কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমালোচনা অবশ্যই হচ্ছে, কিছু যৌক্তিক, কিছু একেবারেই অযৌক্তিক। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে উদ্যোগগুলো আমরা নিচ্ছি, সেগুলো নিয়ে যেভাবে কিছু মানুষ সমালোচনা করছেন। আমরা মনে করি তা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থে করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান বাধা নেই, কারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে আছেন।’

গত জুলাইয়ে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংসতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন কতৃক প্রকাশিত ৪০৩ জন অপরাধী ও সহিংসতায় জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিচারের  ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে, সে প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘জুলাইয়ে হামলা, মামলা ও সহিংসতায় জড়িত সব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিচারের দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেনি। আমি যতটুকু জানি, ৪০০-র বেশি ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত হয়েছে।’

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলে সে বিষয়ে আরও স্পষ্টভাবে অবস্থান জানাবেন উল্লেখ করে মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও আমরা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছি। যারা অপরাধী, তারা যে–ই হোক, আমরা সকল অপরাধীর বিচার চাই।’

সম্প্রতি ডাকসুর সদস্য সর্বমিত্রকে ঘিরে ভাইরাল হওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘যেভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণ বা সমালোচনা করা হচ্ছে, তা গঠনমূলক নয়। কোনো উদ্যোগের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ভুল হতে পারে, কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে আমরা আপসহীন।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসন যদি  শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়, আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। আর যদি না নেয়, আমরা প্রশাসনকে তা নিতে বাধ্য করব। মাদক ব্যবসায়ী বা অপরাধী যেই হোক, ক্যাম্পাসে তাদের জায়গা নেই। আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাব।’