আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রার্থী চূড়ান্তে থাকবে দুই হাজার চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সৌন্দর্য। দুই হাজার ছাত্রজনতার খুনের সঙ্গে জড়িত হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদের ভূমিকা থাকায় ব্যাক্তিদের থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে যাদের ভূমিকা ছিলো, আপোসহীন অবস্থা ছিলো এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আসনে প্রার্থী দেবে না নতুন দলটি। নির্বাচনের স্বার্থে বিএনপি কিংবা জামায়াতের সাথে জোট করবে কিনা তা নিয়ে এখন দলটির মধ্যে নানা বিশেষণ চলছে। তবে এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা বলেছেন তারা এখনি বিএনপি কিংবা জামায়াতের সাথে জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। ৩০০ আসনে তারা প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে তারা ১০০ আসনে প্রার্থী দেবেন। দেশের বড় দলের ব্যক্তিরা যেন এনসিপির মার্কা নিয়ে ভোট করেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের জন্য দরজা খোলা রাখবে এনসিপি।
এ নিয়ে জানতে চাইলে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিপক্ষে কোনো প্রার্থী দেবে না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সোমবার ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। সে তালিকা অনুযায়ী ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ এবং বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হয়েছেন খালেদা জিয়া।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, খালেদা জিয়ার আসনে এনসিপি কোনো প্রার্থী দেবে না। এই গণঅভ্যুত্থানের পরে নতুন একটি সৌন্দর্য এসেছে , খালেদা জিয়া প্রার্থী হয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। তার আপসহীন ও লড়াকু নেতৃত্ব বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অনেক শক্তিশালী করেছে। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানও প্রার্থী হয়েছেন। তিনি যদি বাংলাদেশে আসেন, আমরা তাকেও স্বাগত জানাই। জামায়াত ইসলামের আমির, তিনিও প্রার্থী হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মজলুম ছিলেন, তাকেও আমরা স্বাগত জানাই। আমরা ভাবছি কীভাবে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জামায়াতের আমির, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সহযোদ্ধা, তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পার্লামেন্টে নিয়ে আসা যায়।এনসিপির নেতা আরও জানান, সেই চিন্তা থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, খালেদা জিয়ার আসনে এনসিপির পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থী দেয়া হবে না।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে এনসিপি। এ সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ১০০-১৫০ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। সারোয়ার তুষার আরো জানান, ঢাকা-১১ (রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী) আসনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ (পীরগাছা, কাউনিয়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।এছাড়াও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী উত্তর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত (ঢাকা-১৮), যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া), দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার), উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ (সদর, তেতুলিয়া ও আটোয়ারী), সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব ঢাকা-১৪ (ঢাকা উত্তর সিটি ও সাভার উপজেলার একাংশ), যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২ (সদরের একাংশ ও পলাশ), সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৯ (খিলগাঁও-সবুজবাগ), যুগ্ম সদস্য সচিব সাইফ মোস্তাফিজ সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) এবং জয়নাল আবেদীন শিশির কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, লালমাই) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন,এনসিপি বিপ্লবকে ধারণ করেন। বিপ্লবে যাদের ভূমিকা ছিলো তাদেরকে আগামী সংসদ নির্বাচনে সম্মান জানাবে। প্রার্থী চূড়ান্তে চমক দেয়া হবে। যারা ত্যাগি অভ্যুত্থানে ভূমিকা রয়েছে, যাদের উপর জনগণের প্রত্যাশা আছে তাদেরকে দল চুড়ান্ত করবে। নির্বাচনে জোট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এনসিপি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এককভাবে নির্বাচনে থাকবে আপাতত এই সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে।