Image description
 

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ঘটে যাওয়া একটি প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা পুরো জাতিকে কাঁদিয়েছে। এ ঘটনায় আবারও সামনে এনেছে ঢাকাকেন্দ্রিক রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ঝুঁকিপূর্ণ পরিকল্পনা। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পর এই সুপারিশগুলো আরও জোরালো হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনবহুল শহরগুলোতে এমন প্রশিক্ষণের দরকার নেই এবং ঢাকার বাইরে বিমান বাহিনীর প্রাথমিক ও পরবর্তী পর্যায়ের প্রশিক্ষণ চলে।

বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঢাকার বাইরে সরানোর সুপারিশ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের মূল্যায়ন কমিটি। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ জটিলতা এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে এ সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
 

সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা পর্যালোচনা সভায় বিমান বাহিনীর বর্তমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় বলা হয়, রাজধানীর কুর্মিটোলা ও তেজগাঁও এলাকায় ঘনবসতি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল বৃদ্ধির কারণে নিরাপদ প্রশিক্ষণ পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ প্রেক্ষিতে কমিটি ঢাকার বাইরে উপযুক্ত এলাকা চিহ্নিত করে আধুনিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। প্রাথমিকভাবে রাজশাহী, বগুড়া ও টাঙ্গাইল অঞ্চলের কয়েকটি স্থান বিবেচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

সুপারিশের কারণসমূহ

 

দুর্ঘটনার ঝুঁকি: জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি থাকে, যা সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে।

নিয়ন্ত্রিত আকাশপথের অভাব: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটিমাত্র রানওয়ে থাকায় বাণিজ্যিক ফ্লাইটের সঙ্গে প্রশিক্ষণের ফ্লাইট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্যান্য বিকল্পের ব্যবহার: দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোতে পর্যাপ্ত খালি জায়গা থাকা সত্ত্বেও ঢাকার উপর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই বলে মনে করা হচ্ছে।

 

 

সুপারিশের কার্যকারিতা

 

প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার বাইরে নির্দিষ্ট এবং কম জনবহুল এলাকা নির্বাচন করা হলে তা বিমান কর্মীদের এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরগুলো প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হলে ঢাকার উপর চাপ কমবে এবং সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

প্রশিক্ষণের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতের ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা হ্রাস করবে।

 

বিমান বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমান প্রশিক্ষণ ঘাঁটিগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। আধুনিক বিমান ও সিমুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য অধিক জায়গা ও নিরাপত্তার প্রয়োজন। তাই রাজধানীর বাইরে সরানো এখন সময়ের দাবি।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই আন্তঃবাহিনী পর্যায়ের বৈঠক হবে। এর পরই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম স্থানান্তরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বেশিরভাগ মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঢাকার কুর্মিটোলা ঘাঁটি ও যশোরের বেসিক ট্রেনিং সেন্টারে পরিচালিত হয়। নতুন ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত, নিরাপদ ও প্রযুক্তিনির্ভর করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার।

(ঢাকাটাইমস