Image description

সিলেট বিভাগে আসন সংখ্যা ১৯টি। এর মধ্যে ১৩ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। বাকি রয়েছে ৫টি সংসদীয় আসন। সব আলোচনার কেন্দ্রে এই আসনগুলো। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাচ্ছে হাওয়া। বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন। ভাবনায় আছে জোটের হিসাবও। সেই হিসাব কি হচ্ছে এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বিএনপি’র রেখে দেয়া আসন নিয়ে হিসাব ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে সিলেট-৪ আসন। এবার এ আসন নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে এ আসনে প্রার্থী চেয়েছিল বিএনপি। তিনি সেখানে যাননি। আরিফ সিলেট-১ আসন চেয়েছিলেন। সে আসনও পাননি। বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও আসনটি ফাঁকা রাখায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। আরিফ বাদে এ আসনে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। বলে-কয়ে এ আসনের ভোটের মাঠে নেমেছিলেন। পেয়েছেন সাড়াও। মিফতাহ’র অপেক্ষা বেড়েছে। মিফতাহ সিদ্দিকী জানালেন- ‘তিনি মাঠে আছেন, মাঠেই থাকবেন। 

সামনে কোম্পানীগঞ্জে তার নেতৃত্বে ধানের শীষের পক্ষে শোডাউন দেবেন। তিনি আশাবাদী দল তাকে মূল্যায়ন করবে।’ নতুন করে এ আসনে আলোচনায় এসেছেন বিএনপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। ভোটে মাঠে কয়েকটি শোডাউন দিয়ে তিনি নজর কেড়েছেন। আলোচনায় আছে দলের যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবিরের নামও। জোটের হিসেবে এ আসনে হিসাবও জটিল। জমিয়তের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আলী এ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী। এ কারণে তাকে হিসেবের বাইরে রাখছে না জমিয়ত। জোটের তরফের সিদ্ধান্ত কী হতে পারে সেটি এখন দেখার বিষয়। সিলেট-৪ হিসেবে নিলে   সিলেট-৫ কী করবে জমিয়ত। নাকি দুটি আসন চায় তারা। সিদ্ধান্ত নিতে হবে জমিয়তকে। সিলেট-৫  আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি ২০১৮ সালে এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পাস করতে পারেননি। তখন এ আসনটি ছাড় দিয়েছিল বিএনপি।

 দলীয় প্রার্থী মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন দলীয় নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবার মামুন বেশ আশাবাদী ছিলেন। সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখায় মামুন কিছুটা ক্ষুব্ধ। এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। সিলেট-৫ আসন বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বিএনপি শরিকদের ছাড় দিয়েছে। এ কারণে এবার ধানের শীষের জন্য অন্তহীন অপেক্ষায় কর্মী সমর্থকরা। সেই স্বপ্ন হাতছাড়া হলে বিএনপি’র সাংগঠনিক ক্ষতি পারে বলে জানিয়েছেন ভোটের মাঠে থাকা বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা। সুনামগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। শরিকদের ছাড় দেয়ারও কথা নয়। এ আসনে যোগ্য প্রার্থীর খোঁজ করছে বিএনপি। আসনে যোগ্য প্রার্থী সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী অসুস্থ। সুস্থ হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। মাঠ চষে বেড়িয়েছেন বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি। তবে প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন বিএনপি নেতা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল। বড় বড় কয়েকটি শোডাউন দিয়েছেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থী জামায়াতের শিশির মনির। আসনে চ্যালেঞ্জ থাকবে। ফলে আসনে প্রার্থী ঘোষণায় আরও সময় নিচ্ছে বিএনপি। চিন্তায় রাখা হচ্ছে চূড়ান্ত ফলাফলও। সুনামগঞ্জ-৪ হচ্ছে সদর আসন। হাসান রাজা পরিবারের আধিপত্য এ আসনে। প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এ আসনে বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলার সাবেক সেক্রেটারি এডভোকেট নুরুল ইসলাম ও দেওয়ান পরিবারের সন্তান বিএনপি নেতা দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন তুমুল আলোচনায় রয়েছেন। 

ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে চাউর হয়েছেন এনসিপি’র প্রার্থী দেওয়ান সাজাউর রাজা। তিনিও হাসনরাজা পরিবারের সন্তান। সূত্র বলছে; জোটগত ভাবে বণ্টন হলে এ আসনে এনসিপি’র প্রার্থী সাজাউরের সম্ভাবনা বেশি। নতুবা বিএনপি তার প্রার্থী ঘোষণা করবে। প্রথম ধাপে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় এনসিপি’র প্রার্থী নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা চলছে। জমিয়ত কিংবা অন্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গে এ আসনে জোটগত চিন্তাভাবনা কম বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থানীয় নেতারা। মাঠের আলোচনায় সিলেট বিভাগের মধ্যে এবার যে আসনটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে সেটি হচ্ছে হবিগঞ্জ-১ আসন। নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত। এ আসনে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া। এবার তার দিকে নেই দলের চোখ। নানা কারণে দলের হাই কমান্ডের সুনজরের বাইরে তার অবস্থান। ভাবনায় আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়াপুত্র রেজা কিবরিয়া। সূত্র জানিয়েছে- এ আসনে রেজা কিবরিয়াই পেতে যাচ্ছেন বিএনপি’র দলীয় টিকিট। তিনিও প্রস্তুত রয়েছেন। ইতিমধ্যে বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে কথা বার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। যেকোনো সময় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন। এরপর ঘোষণা হতে পারে তার নাম। স্থানীয় বিএনপিতেও এ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। সিলেটের ফাঁকা থাকা ৫ আসন নিয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় তরফ থেকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জিকে গউছ। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- এ আসনগুলোর মধ্যে সবক’টি যে শরিকদের ছেড়ে দেয়া হবে তা নয়। বিএনপি’র দলীয় প্রার্থীরাও থাকবেন। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানান তিনি।