Image description

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা ও দলীয় কর্মীরা। আসনটি দলের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীকে ছেড়ে দিতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এখনও হাল ছাড়েননি। দলীয় প্রার্থীই মনোনয়ন পাবে বলে আশাবাদী তারা।  

এদিকে, বিএনপির চার মনোনয়নপ্রত্যাশীর ভাগ্য ঝুলে থাকলেও নির্ভার অন্য দলগুলো। ইতিমধ্যে জামায়াতের আব্দুর রউফ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) আসাদুল ইসলাম মুকুল, গণঅধিকার পরিষদের গাজী রুবেল রানা ও এবি পার্টির লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন আহাম্মদ এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনি নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে পাঁচবার বিএনপি, পাঁচবার আওয়ামী লীগ ও দুবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের জ্যেষ্ঠ এ নেতা। তবে তমিজ উদ্দিন ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। তারা সবাই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যার যার অনুসারীদের নিয়ে রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি পালন করছেন এসব নেতা। যদিও তারা বলছেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা নিয়ে ভাবছেন কর্মীরা।

সোমবার বিকালে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন করবেন বগুড়া-৬ আসনে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যেসব আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি, সেগুলো পরে ঘোষণা করা হবে। এর বাইরে কিছু আসন শরিকদের জন্য ছাড়া হবে।’

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তবে ঢাকা-২০ আসনসহ সাতটিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। 

ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বলেন, ‌‘এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। হয়তো কোনও কারণে ঢাকা-২০ আসনের প্রার্থী বাদ পড়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত একটা সিদ্ধান্ত তো হবেই। আমরা আশাবাদী তমিজ উদ্দিনের ব্যাপারে। বিএনপির সবাই মূল দলের। আমরাই মূল দল। তারপরও নেতৃবৃন্দ আছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা শতভাগ আশা করছি, দলীয় প্রার্থী পাবো।’

ঢাকা-২০ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘কেন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, এটা আমি জানি না। আসল কারণ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জানেন। আমি জানতাম, এখানে আমারটা হয়ে আছে। এখন ঘোষণার পর শুনলাম আপাতত স্থগিত। দীর্ঘদিন দল করি, ফলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু ভাবা যাবে না, করাও যাবে না। দেখি অপেক্ষা করি। এ নিয়ে চিন্তিত নই। গুলশানে সাক্ষাৎকারে একটাই মূল কথা ছিল, যাকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে সবাই মিলে তার জন্য কাজ করবো। তবে আমি এখনও আশাবাদী। মনোনয়ন বোর্ড হয়তো খুঁটিনাটি দেখছে। দল যখন করি, দলের বাইরে যাওয়া যাবে না।’

একই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, ‘আমি বর্তমানে দেশে নেই। ওমরাহ করতে এসেছি। ওখানে থাকলে হয়তো আরও ভালো বলতে পারতাম। সিদ্ধান্তটি হয়তো আরও গভীরভাবে যাবে। সেজন্যই এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আমি মনোনয়ন আশা করি, পাবো বলে আমি আশাবাদী।’

একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দুই তরুণ নেতা। দলের সিদ্ধান্তই মেনে নেওয়ার কথা বলছেন তারাও। মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ বলেন, ‘দলের নিজস্ব চিন্তাচেতনা ও পরিকল্পনা রয়েছে। সেভাবেই সিদ্ধান্ত হবে। আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। দল যখন ঘোষণা করবে, সবাই জানবে। আমি দলের আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল। সেটি ধরে রেখে রাজনীতি করেছি। ভবিষ্যতেও সেটি অব্যাহত থাকবে।’

একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল তারুণ্যের পক্ষে। আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। সেজন্য কাজ করছি। আশা করছি, দল ঢাকা-২০ আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে আমাকে মনোনীত করবে। আমি আশাবাদী আছি।’

প্রথম থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ধামরাই উপজেলা ছিল ঢাকা-১৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত। সেই সময় ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মোহাম্মদ ইদ্রিস, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির খান মোহাম্মদ ইসরাফিল, ১৯৯১ সালে পঞ্চম ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালে সপ্তম ও ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির ব্যারিস্টার মো. জিয়াউর রহমান খান। ২০০৮ সালে আসন বিন্যাসের পর ধামরাই হয় ঢাকা-২০ আসন। সেই বছর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বেনজীর আহমেদ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের এম এ মালেক। এরপর ২০১৯ সালে একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেনজীর আহমেদ।