Image description

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল। সোমবার দুপুরে গুলশান-২ এর জাতিসংঘ ভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। 

জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সেটা দলীয় মূলনীতিও। নির্বাচন অবশ্যই শিগগির ও দ্রুত সময়ের মধ্যে হতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই মৌলিক কিছু সংস্কারের পর। সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন ত্রুটিপূর্ণ হবে। তবে নির্বাচন হতে হবে অবশ্যই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে। 

তবে স্থানীয় সরকার নাকি জাতীয় নির্বাচন? কোনটা আগে চায় জামায়াত? এমন প্রশ্নে এখনো কিছু চূড়ান্ত করা হয়নি বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে অংশ নেন দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। 

বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন দলটির নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। 

তিনি বলেন, জাতিসংঘের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল আরো বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলেছে। আজকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুপুরে বৈঠক হয়েছে। তারা কয়েকটি বিষয়ে জানতে চেয়েছে। নির্বাচনে জাতিসংঘ কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, একটা স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কি কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, আর জামায়াতে ইসলামী কীভাবে ভাবছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসংঘ কি ধরনের সহযোগিতা করতে পারে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জানতে চাওয়া হয়েছে-নির্বাচনে সহযোগিতার জন্য জামায়াত জাতিসংঘের সহযোগিতাকে স্বাগত জানায় কি-না। 

আমরা বলেছি, আমরা যেকোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে স্বাগত জানাই, অবশ্যই তা সহযোগিতার জন্য, হস্তক্ষেপের জন্য নয়। সুতরাং যেকোনো ধরনের সহযোগিতা আমরা পেতে রাজি। সেটা হস্তক্ষেপ ছাড়া টেকনিক্যাল ও ফান্ডিং সহযোগিতা হতে পারে। 

আমরা বলেছি, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক নির্বাচনী কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা সংযোগ করার জন্য। এটা সম্ভব হলে নির্বাচন পরিস্থিতি পুরোটা বোঝা যাবে। ফান্ডিংয়ের বিষয়টা বড়। এটা নিয়েও কথা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ সহযোগিতা করতে পারে। 

জাতিংসঘ প্রতিনিধি দল জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেটা আমাদের দলীয় মূলনীতির ভেতরেই আছে। 

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ এ নেতা বলেন, নির্বাচনের তারিখ কবে হতে পারে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, অবশ্যই যত শিগগির, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। তবে অবশ্যই মৌলিক কিছু সংস্কার আগে দরকার। সেটা না করেই আগে নির্বাচন করতে গেলে তা আগের নির্বাচনের মতোই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নির্বাচন স্বচ্ছ করার জন্য জরুরি কিছু সংস্কার বা পরিবর্তন আগে দরকার। কিছু ইলেক্টোরাল ল পরিবর্তন করা দরকার। তাতে নির্বাচন কমিশন আরও বেশি শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি সংবিধানের কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা দরকার বলে আমরা জানিয়েছি। 

মৌলিক পরিবর্তনে আমরা বলেছি যে, ‘যেমন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী কেউ থাকতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে।’ 

তাহের বলেন, যেসব সংস্কার কমিশন এরইমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, আমরা মনে করি, সেগুলো নিয়ে সরকারকে অনতিবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ডায়ালগ শুরু করা দরকার এবং এই ডায়ালগের মাধ্যমে সচেতনতা, স্বচ্ছতা তৈরি করে যথা শিগগির সম্ভব নির্বাচনের আয়োজন করা দরকার। অর্থাৎ নির্বাচন আয়োজন করার জন্য মিনিমাম, পসিবল, নেসেসারি রিফর্মসের পর নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে আমরা নির্বাচন চাই। 

সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন ত্রুটিপূর্ণ হবে বলে আমরা জানিয়েছি। আমরা এটাও বলেছি, সংস্কারের নামে অযথা সময়ক্ষেপণ করা সঠিক হবে না। জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলবেন।

বিএনপি স্পষ্ট বলেছে, আগামী ৫ আগস্ট নির্বাচন চাইছে। এটাকে আপনারা কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে জামায়াতের এ শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের বড় দল। নির্বাচন নিয়ে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। তারা তাদের মতো করে মতামত ব্যক্ত করেছেন। আমরা বলেছি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে তারপর যথা শিগগির নির্বাচনের আয়োজন করা হোক। 

সব দলের অংশগ্রহণ বা পার্টিসিপেটরি নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাহলে কি আওয়ামী লীগসহ নির্বাচনের কথা আপনারা বলছেন? জানতে চাইলে তাহের বলেন, পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের পদক্ষেপ ও সরকারি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের যে মতামত ও ম্যান্ডেট থাকবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমাদের নিজস্ব বিশেষ কোনো স্ট্যান্ড নেই। 

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আজকের বৈঠকে আওয়ামী লীগ নিয়ে বিশেষ কোনো আলোচনা বা জানতে চাওয়া হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে তাহের বলেন, তারা খুব সিরিয়াসলি জানতে চেয়েছে যে, সব দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা? আমরা বলেছি জামায়াতে ইসলামী কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে আইনগত বিষয়ে মতামত দিচ্ছে না। এটা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। এমবার্গ (নিষেধাজ্ঞা) পরিস্থিতির ওপরে নির্ভর করছে। 

স্থানীয় সরকার নাকি জাতীয় নির্বাচন? কোনটা আগে চাইছে জামায়াতে ইসলামী? জানতে চাইলে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, এই বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত করিনি। আমরা আলোচনা করব। তারপর আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করব। 

নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন যে মতামত দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেটা হলে আল্টিমেটলি দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন থাকছে না। এটাকে জামায়াত কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটাতো আমাদের একেবারেই মৌলিক দাবি। এর আগে কেয়ারটেকার সরকারের দাবি তো প্রথম জামায়াতে ইসলামীই করেছিল। আমরা আন্দোলন করেছি। আওয়ামী লীগও আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। পরে না এটা অন্যান্য সরকার সমর্থন দিয়েছিল। এই কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্তও করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আবার নিজের সুবিধার জন্য সংবিধান থেকে বাদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সুতরাং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। এটাই আমাদের মৌলিক দাবি এবং এটাই হতে হবে।