বাংলাদেশ হিন্দু লীগের মহাসচিব বীরেন্দ্র নাথ মৈত্র বলেছেন, আমি আপনাদের কাছে বলবো, আজকে বাংলাদেশে যদি হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে, তার কমপক্ষে ৯০ ভাগ ক্ষতি করেছে আওয়ামী লীগ। দেশে হিন্দুদের জন্য রিজার্ভেশন ছিল, সেপারেট ইলেকশন উইথ রিজার্ভেশন - সেটা কেটে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ভাষা সৈনিক ও শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের ১৩৯ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
বীরেন্দ্র নাথ মৈত্র বলেছেন, আমি সবার আগে আপনাদের কাছে জানতে চাই, “লীগ” শব্দটা আছে, এটা কি আওয়ামী লীগের বি টিম কিনা? আপনারা জানেন, বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে শুধু আপনার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যবহার করেছে। এরা এই দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় সারাজীবন গুন টেনেছে। কোনোদিন নৌকায় ওঠার সুযোগ পায়নি। বরং তাদেরকে নৌকা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে ক্ষতি করেছে যারা, তাদেরকেই বাংলাদেশের হিন্দুরা পূজা দিয়ে দেবতার আসনে, দেবীর আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। আর তা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আজকে বাংলাদেশ হিন্দু লীগ জেগে উঠেছে। এখনো বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটির মতো হিন্দু আছে। এই সমস্ত হিন্দু যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, আমি মনে করি বাংলাদেশকে গড়ার জন্য আমাদের একটা বৃহত্তর ভূমিকা থাকতে পারে। এই দেশে আমরা একটা শান্তি ও সম্মানজনক সহঅবস্থান পেতে চাই। আজকে বাংলাদেশে আমার এই ভীত, সন্ত্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায় যারা দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছেন, আমি তাদেরকে অভয় দিয়ে জানাতে চাই—আপনারা কেউ দেশ ছেড়ে যাবেন না। এই দেশ একদিন শান্তির দেশ হবে। আমি ঈশ্বরের নামে আপনাদেরকে বলে যেতে চাই, এ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
একবার শেখ হাসিনা লন্ডনে গিয়ে হিন্দুদের সম্পর্কে বলেছিলেন “এক পা ভারতে আর এক পা বাংলাদেশে রেখে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া যায় না।” আমি প্রশ্ন করতে চাই, আজকে কেন আপনি সেই ভারতেই আশ্রয় নিলেন? কী কারণে আশ্রয় নিলেন? একটি মাত্র কারণে—যাতে বাংলাদেশের হিন্দুরা বোঝে, ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে মানে শেখ হাসিনা ভারতের লোক, বাংলাদেশের হিন্দুর লোক নয়। আমরা এটা মানি না, মানবো না, কখনোই মানবো না। আমরা এদেশের হিন্দু-মুসলমান, আমরা একই মায়ের সন্তান। আমাদেরকে বিভাজন করা যাবে না। অতএব, কোনো প্রকার বিভাজনের রাজনীতি সৃষ্টি করে বাংলাদেশ হিন্দু লীগকে কারো দালাল হিসাবে পরিণত করা যাবে না। বরং আওয়ামী লীগের খপ্পর থেকে, আওয়ামী লীগের বিমাতা-সুলভ আচরণ থেকে এই দেশের হিন্দুদেরকে রক্ষা করার জন্যই হিন্দু লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮৪ সালে।
বাংলাদেশ হিন্দু মহাসভার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা দীপক চন্দ্র গুপ্ত বলেন, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার দীপ্ত প্রতীক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অগ্রদূত, নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার যোদ্ধা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু তারা ধ্বংস করতে পারেনি তার আদর্শ ও স্বপ্ন। আজকের নতুন প্রজন্মের প্রতি আমার আবেদন আমরা যেন তার আত্মত্যাগকে শুধু স্মরণেই সীমাবদ্ধ না রাখি। আমরা যেন তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবাধিকার রক্ষা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও বৈষম্যবিহীন সমাজ গড়ে তুলি, ভাষা ও রক্ষা করি।
ভাষা সৈনিক ও শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের ১৩৯ তম জন্ম বার্ষিকীর উপলক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু লীগ কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা।