বিএনপির এমপি প্রার্থীর একটি সেমিনারে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের গালি দিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের গণিত বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজিব কুমার সিনহার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রাতে ‘গণিত বিভাগ (২০২৪-২৫)’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভয়েস মেসেজে তাকে সহপাঠীদের উদ্দেশে অশ্লীল ভাষা ও হুমকি দিতে শোনা যায়। তিনি ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন বলে জানা গেছে। এতে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী খন্দকার মুক্তাদির চৌধুরীর ‘নীতি প্রণয়নে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সেমিনারে ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার চেষ্টা করেন সজিব। স্থানীয় ভাষায় হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘নটির ফোয়াইন কোনোগু থাকছে না… মাথাত রাখিও… কোনো ভেজাল ওইবো, কোনোদিন যদি আমারে পাও…’।
এ প্রোগ্রামের বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা ৫৫ মিনিটে সজিব তাদের ব্যাচের গ্রুপে একটি টেক্সট মেসেজ দেন। পরে সেখানে ভয়েজ মেসেজে বলেন, ‘কালকের এই সেমিনারে আমার পরিচিত বলতে আমার আর জাফরের পরিচিত যারা যারা আছো ডিপার্টমেন্টে, সবাইরে দেখতে চাই। কারো যেন মিস যায় না। মাস্ট সবাই এখানে এটেন্ড থাকবায়। কালকের এ সেমিনারে আমরা ছাত্রদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়া মাত ওইবো। আমার পরিচিত যারা মুখ আছো ডিপার্টমেন্টে, সবরে যেন দেখি। সব থাকবায় এটেন্ড।’
পরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা ৩৪ মিনিটে সজিব আবার ভয়েজ মেসেজ দিয়ে বলেন, ‘কিতা বেটাইন আও না কেনে, তোমরারে নু কইলাম সব থাকতায় ক্লাসে আইজ একটা সেমিনার আছে। তোমরা দেখি কথা হুনো না। আও সব আও। এবো সময় আছে।’
এরপর বিকেল ৪ টা ২৫ মিনিটে সজিব ভয়েজ মেসেজ দিয়ে বলেন, তোমরা একোটারে কাল নোটিশ দিয়া, ভয়েজ দিয়া গ্রুপের মাঝে কইলাম যেন তোমরা থাকিও আইজ কলেজে একটা সেমিনার আছে। নটির ফোয়াইন কোনোগু থাকছে না। এক আমি, জাফর আর প্রীতি বাদে কোনো নটির ফোয়াইন ক্লাসে নায়। খালি কোনো সমস্যা ওইবো ক্যাম্পাসে, কোনো ভেজাল ওইবো বা কোনো প্রবলেম ওইবো, এটায় কোনোদিন যদি আমারে পাও, তে কিতা কইতাম। তোমরার কোনো সমস্যাত আমরারে পাইতায় না। মাথাত রাখিও যতটা ফোয়াইন আছো। একটা পোয়ারেও পাইছি না আজ। কালকে ওতো করি কইলাম। তোমরার কোনো ভেজালে বুঝিও না আমরারে আর পাইবায় ক্যাম্পাসে, ওকান মাথাত রাখিও।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের একই ব্যাচের ৩ জন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সজিবের ইনভাইটেশনের মেসেজটা অনেকটা ছাত্রলীগ টাইপের ছিল যে, আমাদের সেখানে থাকতে হবে। একারণে এদিন ক্লাসে তেমন শিক্ষার্থী যায় নি শুধুমাত্র প্রোগ্রামে যাওয়া লাগবে বলে। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে সজিবের দেওয়া ভয়েজ মেসেজে অনেকটা আতংক বিরাজ করছে আমাদের ব্যাচের সবার মধ্যে। সে আমাদের ইনভাইট করতে পারে, কিন্তু এভাবে হুকুম বা হুমকি দিতে পারে না। যাদের ভালো লাগে, তারা যাবে। এখানে গ্রুপে এরকম মেসেজ দেওয়ার মানে তো নাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সজিব কুমার সিনহা বলেন, আমি জাস্ট আমার পরিচিত ১০/১২ জন বন্ধু আছে, তাদেরকে যাওয়ার কথা বলেছি। সবাইকে পার্সোনালি বললে অনেক সময় লাগবে বিধায় গ্রুপে সরাসরি বলে দিয়েছি। এখানে আমি আমার পুরো ব্যাচকে বলিনি। আর আমি রাজনীতি করি না। জাফর নামে আমার এক বন্ধু আমাকে এই মেসেজ দিতে বলে। সেজন্য জাস্ট দিয়েছি। আর কিছু না। আর আমাদের প্রায় সবাই-ই গ্রুপে গালি দিয়ে কথা বলে, এজন্য সাধারণভাবে এটা আমি বলেছি।
এ বিষয়ে জাফর বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনীতি করি, কলেজে কিছুতে নেই। এ প্রোগ্রামের বিষয়ে আমরা সবাইকে জানিয়েছিলাম, কেননা এটা অরাজনৈতিক প্রোগ্রাম। আমাকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফ্রেন্ড হিসেবে আমরা যেভাবে বলি, সজিবে ওইভাবে বলছে। আমরা ফ্রেন্ড হিসেবে এভাবে কথা বলি সব-সময়। এখন মাঝখান থাকি কে এটাকে লাগাইছে, ২/৩ জনকে আমরা সন্দেহের তালিকায় রাখছি, তাদের খোঁজতেছি দেখি পাই কি না।
এ বিষয়ে এমসি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি খান মোহাম্মদ সামি বলেন, সজিব ছাত্রদলের কেউ না, সে সাধারণ শিক্ষার্থী। আমরা সবাইকে দাওয়াত দিয়েছি। এটা কেউ সাধারণভাবে নিছে আর হে হয়তো ডিপলি নিছে। এটা শুনে আমার কাছে খারাপ লাগছে। তারে ফোনে পাইনি। তাকে পেলে বলতাম এটা তার বলা ঠিক হয়নি। সে হয়তো আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী।
এ বিষয়ে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম আহমদ খান বলেন, আমার কাছে কয়েকজন ছাত্র ফোন দিয়েছিল এবং শিবিরের সভাপতিও বলেছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের। অনলাইনে কি হবে না হবে, সেটা যাদের গ্রুপ তারা জানবে, এটা তারা সমাধান করুক। অনলাইনের বিষয়টা আমাদের এখতিয়ারে নেই।