ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কার নিশ্চিত না হলে চলমান পুলিশ সংস্কার উদ্যোগ অর্জিত হবে না।
‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ইফতেখারুজ্জামান। আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরে এখনো প্রশাসনে দলীয় প্রভাব বিস্তারের সংস্কৃতি চলমান আছে বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এখনো নিয়োগ পদোন্নতি থেকে শুরু করে কাকে ত্যাগ করা হবে, কাকে ত্যাগ করা হবে না, মামলা বাণিজ্য, গ্রেপ্তার ও জামিন বাণিজ্য সবকিছুর মধ্যে চলছে। নিঃসন্দেহে কোনো ডাউট নেই এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’
যৌথভাবে গোলটেবিলের আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
পুলিশে গোয়েন্দা সংস্থা, অন্য নিরাপত্তা সংস্থা এবং নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে না পারলে পুলিশ সংস্কার কেন, কোনো সংস্কার অর্জিত হবে না বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান।
আগামী নভেম্বর থেকে পুলিশের নতুন পোশাক যুক্ত করার কথা রয়েছে বলেন ইফতেখারুজ্জামান। তবে ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন নতুন পোশাকের চেয়েও পুলিশের বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নয়নে নজর দেওয়া বেশি জরুরি। তিনি মিরপুরের একটি পুলিশ ব্যারাকের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে ২০০ কর্মীর জন্য একটি বাথরুম। ৬০ স্কয়ার ফিটের একটি ঘরে ২০ জন ঘুমায়।
এই অবস্থার জন্য শুধু রাজনৈতিক প্রভাব দায়ী না বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কোশ্চেন পুলিশের নতুন পোশাক ইম্পর্ট্যান্ট বাট ইজ ইট মোর ইম্পর্ট্যান্ট দ্যান দ্যাট দ্য কন্ডিশন অফ দেওয়ার ব্যারাক।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে মাঠপর্যায়ে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের সংস্কৃতি নিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ শুধুমাত্র ব্যবহৃত হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। বরং তারা এটাকে উপভোগ করেছে।’ তিনি মনে করেন, এই ক্ষমতা ব্যবহার করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন। ফলে কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পরিবর্তনও জরুরি।
শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
গোলটেবিলে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান।
এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি কাজী মো. ফজলুল করীম এ বৈঠকে অংশ নেন।